চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে শত বছরের ব্যবহৃত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে এলাকার একটি প্রভাবশালী গং। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে সেই পথে চলাচলকারী কয়েকশত মানুষ। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মাঝে দ্বন্দ্ব পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে। ভিতরে ভিতরে চলছে ক্ষোভ। রাস্তার জন্য অবরুদ্ধরা প্রভাবশালীদের হাতে খেয়েছেন মার, হয়েছেন জখম। ছিলেন হাসপাতালে ভর্তি। তবুও চলাচলের একমাত্র পথ খোলা হয়নি। প্রভাবশালীদের সাথে ক্ষমতায় না পেরে অসহায় অবরুদ্ধ সময় পার করছেন শত শত মানুষ। বিষয়টির দ্রুত সমাধান চান ভুক্তভোগী ও সচেতন এলাকাবাসী। ঘটনাটি উপজেলার ৯নং গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পশ্চিম চাঁদপুর গ্রামে।
ঘটনার সূত্রে জানা যায়, শতবছর ধরে ব্যবহৃত চলাচলের রাস্তাটি দিয়ে প্রায় ১০/১২টি বাড়ির লোকজন চলাফেরা করে আসছেন। তাদের প্রতিদিনের সকল কাজে ব্যবহৃত হতো এই রাস্তাটি। রাস্তাটি সরকারি নথিতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় রাস্তাটির জন্য স্থানীয় একজন জমি দান করেন। যাতে করে এইসকল বাড়ির মানুষের চলাচল বন্ধ না হয়। কিন্তু হঠাৎ স্থানীয় ইউপি সদস্য ও থানা পুলিশের সহযোগিতায় রাস্তাটি বন্ধ করে দেন দুলাল মিজি গং। এমনটিই অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। রাস্তার বিষয়ে গত কয়েক মাসে উভয়ের মাঝে একাধিকবার বিক্ষিপ্ত মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে করে কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। রাস্তার বিষয়ে ভুক্তভোগী অবরুদ্ধরা ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার অভিযোগ করার পরে ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অন্যদের উপস্থিতিতে চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত করার সালিশী সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দুলাল মিয়া মিয়াজি গংরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সালিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখি বারবার কোণঠাসা করে রাখছে অসহায় খেটে খাওয়া মানুষদেরকে। শেষমেশ ইউনিয়ন পরিষদও ব্যর্থতা স্বীকার করে নিলো। কোনো এক অদৃশ্য অপশক্তির কাছে সকলে চুপ হয়ে যায়। এদিকে ভুক্তভোগীরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় রাস্তাটি বন্ধ রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগী নুরুজ্জামান, আফছার উদ্দিন, হাজেরা বেগম, শাহজাহান মোল্লা, আক্কাস ঢালী বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে আসছে। আমাদের বাড়ির মানুষের এবং আশেপাশের অন্যান্য মানুষজনের চলাচলের এই একটিমাত্রই রাস্তা রয়েছে। রাস্তার জন্য নির্দিষ্ট কোনো জমি না থাকায় আমরা সকলে মিলে তাদের থেকে চাঁদা তুলে ২ শতক জমি ক্রয় করি। যেন ভবিষ্যতে তারা কোনো কথা শোনাতে না পারে, খোঁটা দিতে না পারে। কিন্তু তারা আমাদের কেনা জমির রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই মামলা-হামলা করে আসছে। বাহির থেকে লোক ভাড়া করে এনে আমাদের মারধর করে। আমরা থানায় অভিযোগ করলেও তারা কিছুদিন পর চুপ হয়ে যায়। আমরা কৃষিকাজ করে কোনোরকম সংসার চালাই। তাদের সঙ্গে লড়তে এত টাকা পাব কোথায়!
তারা আরও বলেন, আমাদের উপযুক্ত মেয়েদের বিয়েশাদী দিতে বেগ পেতে হচ্ছে এই রাস্তার জন্য। আত্মীয়-স্বজনদেরও বাধাগ্রস্ত করে তারা। আমাদের নামে তারা শুধু বদনাম আর অপপ্রচার করে। এখন তো পুরোপুরিভাবে চলাচলের রাস্তাই বন্ধ করে দিলো। আমরা আরও বিপদে পড়লাম। চলাচল করতে কষ্ট হয় বিধায় তাদের থেকেই জমি কিনেছি। এখন তারাই বাধা দেয়। স্থানীয় আলতাফ রাড়িসহ দুলাল মিয়ার ভাইয়ের থেকে জায়গা কিনেও শান্তিতে চলাচল করতে পারছি না। এখন আমরা অবরুদ্ধ আছি। চলাচলে অনেক কষ্ট পেতে হচ্ছে। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের অসহায়দের পাশে থাকবেন বলে আশাবাদী।
রাস্তা অবরুদ্ধকারীদের একজন দুলাল মিজি বলেন, এই রাস্তা দিয়ে তারা বহুবছর চলাফেরা করেছে। আমরা তাদের বাধা দেই নাই। কিন্তু এইদিক দিয়ে কোনো সরকারি রাস্তা নাই। আমাদের জমি আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।
ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, এই রাস্তা নিয়ে অনেকবার ইউনিয়ন পরিষদে বসা হয়েছে। কিস্তু কোনোভাবে দুলাল মিয়া রাস্তা দিতে রাজি হয়নি। ঐদিকে ওরাও গরীব মানুষ, তাদের পক্ষে তেমন কেউ নেই। তাদের চলাচলের জন্য এই রাস্তাটি রয়েছে। আর কোনো রাস্তা নাই।
এএসআই আমজাদ বলেন, আমি অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। দুলাল মিয়াকে বলেছি রাস্তা খুলে দিতে, কিস্তু সে রাজি হচ্ছে না। আমি কি করব।