মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ ||
চট্টগ্রামে হাজীগঞ্জের আড়াই বছর বয়সি শিশু আব্দুর রহমান আরাফ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন, চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জসিম উদ্দিন। মামলার রায়ে তিন আসামির সবাইকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। বুধবার (১৮ মে) আসামীদের উপস্থিতিতে তিনি এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগর এলাকার মো. ফরিদ, ভবনের দারোয়ান মো. হাসান ও হাসানের মা নাজমা বেগম। রায়ের পর তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।
এর আগে মামলায় রাষ্ট্রপ ও আসামিপরে যুক্তি-তর্ক শুনানি শেষ হওয়ার পর আদালত গত ৩০ মার্চ (বুধবার) রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন। তার আগেই আরাফের বাবা মায়ের ডিএনএ টেষ্টের (পরীক্ষা) আবেদন করেন এক আসামী। সেই আবেদন নাচক হয়ে যাওয়ার পর ১৮ মে (বুধবার) রায় ঘোষনা করে আদালত।
হত্যাকান্ডের শিকার শিশু আব্দুর রহমান আারাফ হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের তারালিয়া গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম ও ফারহানা বেগম দম্পত্তির একমাত্র সন্তান। আব্দুল কাউয়ুম একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকুরী করার সুবাদে তিনি পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
২০২০ইং সালের ৬ জুন ওই বাসার ছাদে পানির ট্যাংকি থেকে শিশু আরাফের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে শিশু আরাফের বাবা আব্দুল কাইয়ুম একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে পুলিশ হত্যাকান্ড সংঘঠিত এলাকার সিসি টিভির ফুটেজ দেখে তিন আসামিকে গ্রেফতার করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ জুন বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরে একটি ভবনের ছাদে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয় দুই বছরের শিশু আরাফকে। ওই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় আসামি করা হয় মিয়াখান নগরের বাসিন্দা মো. ফরিদ, ভাড়া বাসার দারোয়ান মো. হাসান ও হাসানের মা নাজমা বেগমকে। তারা শিশু আরাফের হত্যাকান্ডে জড়িত বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
শিশুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন বিকালে মিয়াখান নগর ভবনের সামনে গাড়ি রাখার জায়গায় খেলছিল শিশু আরাফ। মায়ের কাছে চানাচুর খাওয়ার পর সে পানি খেতে চেয়েছিল। এ সময় আরাফের মা ফারহানা ইসলাম পানি আনতে ঘরের ভিতরে যান। তিনি ফিরে এসে দেখেন ছেলে নেই। এ ফাঁকে আদর করার ছলে আরাফকে নিয়ে ভবনের ছাদে চলে যান দারোয়ানের মা নাজমা বেগম।
সেখানে পানির ট্যাংকে ফেলে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর ভবনটির বাসিন্দা নাজমা বেগম, তার ছেলে বাড়ির দারোয়ান মো. হাসান ও তাদের পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তখন নাজমা বেগম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে
প্রতিবেশীর শিশুকে আদর করার ছলে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করেন ।
নাজমা বেগম আদালতে দেওয়া জবানবন্দি তারা বলেন, ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অর্থের লোভ এবং পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদের প্রলোভনে বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনার সময় নাজমার ছেলে হাসান (২৩) গেইট খুলে দিয়ে তাকে ছাদে উঠতে সহায়তা করেছিলেন।
১৯ নম্বর দণি বাকলিয়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়া ছিলেন আটতলা ওই ভবনের মালিক। মূলত তাকে ‘মামলায় ফাঁসাতে’ ওই ভবনের বাসিন্দা কোনো এক শিশুকে হত্যা পরিকল্পনা এবং শিশু হত্যা করতে নাজমা বেগমকে ২০ হাজার টাকার লোভ দেখান ফরিদ।
আসামী ফরিদ বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারী ছিলেন। ঘটনার আগে কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভবন মালিক নুরুল আলম মিয়ার প্রচারে হামলার ঘটনায় ফরিদকে আসামি করা হয়েছিল। এ কারণে তিনি ক্ষুদ্ধ ছিলেন। এর প্রতিশোধ নিতে ভাড়াটিয়ার ছেলেকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে ফাঁসাতেই এ হত্যাকান্ড।
এ দিকে দুই বছরের মধ্যে আদালত কর্তৃক মামলার তিন আসামিকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হত্যাকান্ডের শিকার শিশুটির পরিবার। তাৎনিক এক প্রতিক্রিয়ায় আরাফের বাবা আব্দুল কাইয়ুম সংবাদকর্মীদের বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। এতে আমরা খুশি ও আনন্দিত। দেশে আইনের শাসন রয়েছে এই রায় তার প্রমান বহন করে। এখন সরকারের কাছে একটাই দাবী, দ্রুত এ রায় কার্যকর করা হউক।