চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫ নং গুপটি ইউনিয়নে মেয়েদের সঙ্গে নাচতে না দেয়ায় বিয়ে বাড়িতে হামলা ভাংচুর মারধর ও লুটপাট পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৫ নভেম্বর (সোমবার) ইউনিয়নের শ্রীকালিয়া গ্রামের( ঘোষ বাড়িতে )এ ঘটনা ঘটে।
বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়েদের সঙ্গে ছেলেদের নাচগান করতে না দেয়ার আক্রোশে এ হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট ও পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেছে ভুক্তভোগী পরিবার ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শ্রী কালিয়া গ্রামের মো. আমিন সর্দার এর ছেলে রুবেল এর বিয়ে উপলক্ষে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সোমবার । প্রায় তিন সহস্রাধিক আত্মীয় স্বজন ও গ্রামবাসীকে আমন্ত্রণ দেয়া হয় ওই অনুষ্ঠানে।
এ উপলক্ষে সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে আমন্ত্রিত অতিথিদের (মেয়েরা) নিয়ে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একই গ্রামের মো. নুরু ডাইভারের বখাটে ছেলে সুমন মিজি বিনা আমন্ত্রণে তার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ওই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অনাধিকার উপস্থিত হয়।
এরপর মেয়েদের সঙ্গে নাচানাচি শুরু করলে অনুষ্ঠানের আয়োজনকারীদের মধ্যে একজন এসে তাদেরকে নাচানাচি করতে বারণ করে। এরপরও জোর করে নাচানাচি করতে থাকলে কথা কাটাকাটি করে তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
এ বিষয়ে মুকসুদা বেগম (৬৫) বাদী হয়ে, সুমন মিজি (৩০) পিতা নুরু ড্রাইভার গ্রাম শ্রীকালিয়া, মোঃ বাবু (২৪) পিতা খোকা মিয়া, মোহাম্মদ সিয়াম (২৪) পিতা খোকন, মোঃ খোকন (৪৫) পিতা মোঃ কাসেম, মোহাম্মদ রাসেল (৩৬) পিতা হান্নান মিয়া গ্রাম লক্ষ্মীপুর। এদেরকে আসামি করে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে মুকসুদা বেগম বলেন ,ঘটনার দিন সুমন মিজি সহ কয়েকজন বিনা দাওয়াতে আমার ছেলে রুবেলের গায়ে হলুদের এসে বিভিন্নভাবে অনুষ্ঠানে থাকা লোকজনদের সাথে বেআইনিভাবে হট্টগোল করতে থাকে। তাদেরকে বাধা দিল তারা কোন কিছুর কর্ণপাত না করে আরো বেশি উশৃঙ্খল হতে থাকে একপর্যায়ে তাদেরকে ওই অনুষ্ঠান থেকে সরে যেতে বাধ্য করলে তারা যাওয়ার সময় আমার মেজুমেয়ের গলা থেকে দেড় বড়ি ওজনের একটি নেকলেস ও বড় মেয়ের গলা থেকে দুই বরি ওজনের একটি স্বর্ণের নেকলেস নিয়ে যায় এবং নিচে গিয়ে আমাদের বিয়ের গেইট ভাঙচুর করে এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য বাড়ির সামনে আমাদের পিকআপ ভ্যান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আমি নিরুপায় হয়ে এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
এই অভিযোগটি ওসি সাহেব ফরিদগঞ্জ থানার এসআই আমজাদ এর কাছে দিলে এসআই আমজাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং আমাকে থানায় যেতে বলেন। আমি একে একে এই তিনবার থানায় যাই । তিনি মামলাটি এফেয়ার করে কোর্টে পাঠাবেন বলে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। আমি টাকা দিতে সম্মতি হই তারপরও তিনি কেন জানি কয়েকদিন ঘোরাঘুরির পরে আমাকে বলে এই নিয়ে আমার কাছে বিভিন্ন দিক থেকে চাপ আছে আমি বিষয়টি পরে দেখতেছি।
এ বিষয়ে মুকসুদার স্বামী আমিন সরদার বলেন ,ঘটনার দিন দুর্বৃত্তরা যে অমানুষিক কার্যক্রম আমার ছেলের বিয়ে অনুষ্ঠানে চালিয়েছে এবং লুটতরাজ ও অগ্নি সংযোগ করেছে আমি এলাকায় বিভিন্ন মানুষের কাছে ঘুরে ও পরবর্তীতে থানায় গিয়েও এর কোন বিচার পেলাম না। আমি পুলিশ প্রশাসন সহ উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি যেন আমার এই ঘটনার অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। পাশাপাশি আমার মেয়েদের স্বর্ণলুট ও পিকআপ ভ্যান সহ প্রায় ২০থেকে ২৫ লক্ষ টাকার যে ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতিপূরণ যেন আদায় হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার অনেকেই বলেন, সেদিনকার ঘটনাগুলো খুবই দুঃখজনক এ বখাটে ছেলেগুলো বিনা দাওয়াতে গায়ে হলুদে এসে যে অমানুষিক কাজগুলো করেছেন আমরা এলাকাবাসী এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।
এ বিষয়ে এসআই আমজাদ বলেন ,আমার কাছে মুকসুদা বেগম একটি অভিযোগ দিয়েছে যেহেতু বিষয়টা একটু ক্রিটিক্যাল সেজন্য অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে বিষয়টি বিচারের আওতায় নেওয়া হবে।