নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ভূমি পল্লী আবাসন প্রকল্পে চলছে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। পল্লীর নিয়ন্ত্রণ নিতে কয়েকজন বাড়ির মালিক এক জোট হয়ে গড়ে তুলেছে সিণ্ডিকেট। তারা ভূমি মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির কর্মকর্তাদের তোপের মুখে ফেলে সার্ভিস চার্জ আদায়কারী মোহাম্মদ জিয়াউল হক ভূঁইয়াকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য করায় এ লাড়াই শুরু হয়।
জানা গেছে, ভূমি পল্লী আবাসনে সিকিউরিটি সার্ভিস, মশা নিধন, রাস্তা-ড্রেন পরিচ্ছন্নতা ও বাসাবাড়ির বর্জ্য অপসারণ চার্জ আদায় করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির(রেজি: নং-৩৮৪/২১) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী ও সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত একপত্রে গত বছরের ১ নভেম্বর ও সমিতির বকেয়া আদায়ের জন্য আরেকটি পত্রে ২৪ ডিসেম্বর আবাসনের ৩ নং সড়কের এ-১৭/১ নং প্লট মালিক জিয়াউল হক ভূঁইয়াকে দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পেয়ে তিনি ফ্ল্যাটপ্রতি সমিতির নির্ধারিত সিকিউরিটি সার্ভিস চার্জ ১৫০ টাকা, গৃহস্থালি বর্জ্য আপসারণ ১০০ টাকা, রাস্তা-ড্রেন পরিচ্ছন্নতা ও মশা নিধন বাবদ ৫০ টাকা করে আদায় করে আসছিলেন। কিন্তু ১ নং সড়কের বাড়ির মালিক সোলায়মান ও ৪ নং সড়কের ওমর ফারুক সোহেল নির্ধারিত সার্ভিস চার্জ দেয়নি। ফলে সোহেলের কাছে প্রায় ২৬ হাজার ও সোলায়মানের কাছে ১৩ হাজার টাকা বকেয়া জমে যায়।
জিয়াউল হক বলেন, বকেয়া পরিশোধের জন্য সোহেল ও সোলায়মানকে চাপ দিলে তারা কিছু প্লট ও বাড়ির মালিকদের নিয়ে সিন্ডিকেট করে আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে তারা বহিরাগত লোকজন নিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি সমিতির কার্যালয় ঘেরাও করে আমাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তাদের পছন্দের লোককে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান। ভিত্তিহীন অভিযোগে তাদের তোপের মুখে সমিতি কর্তৃপক্ষ গত ২ ফেব্রয়ারি আমাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে যারা পল্লীতে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নানা অনিয়ম করেছিল সেই সাইফুল ইসলাম, মিনহাজ উদ্দিন আহমদ,আলমগীর পাটোয়ারী, তোফাজ্জল হোসেন ও জসিম উদ্দিনকে দায়িত্ব দেন।
জিয়াউল হক অভিযোগ করে বলেন, পল্লীর ৮ নং সড়কের নিরাপত্তার দেয়াল ভাঙা, ময়লার ড্রেনের পানির ট্যাংকির জায়গা ক্রয় করা ও সার্ভিস চার্জ আদায়ের কথা বলায় আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তারা আমার নামে একটি মামালা করেছিল। সে মামলা থেকে আমি অব্যাহতি পেয়েছি। ৫ আগস্টের পর পল্লীর নিরাপত্তা, পরিবেশ ও কাঠামোগত উন্নয়নের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করায় তারা পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তুলে। সমিতি কর্তৃপক্ষ আমাকে অব্যাহতি দিয়েছে তা নিয়ে আক্ষেপ নেই। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে আনিত চাঁদাবাজির অভিযোগ তদন্তের দাবি জানাই।
জানতে চাইলে সমিতির বকেয়া রয়েছে স্বীকার করে মূলহোতা ওমর ফারুক সোহেল বলেন, সার্ভিস চার্জ আদায়ের জন্য জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেইনি। তিনি ভূমি পল্লীর ভেতরে ও বাইরের ফুটপাত দোকান থেকে দৈনিক ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করতেন। এতে বিএনপি ও পল্লীর বদনাম হয়। তাই থানা বিএনপির নেতাদের অবগত করে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন,ভূমি পল্লীর সমিতির অফিস ঘেরাও করার ঘটনা আমার জানা নেই। কেউ আমাকে এ বিষয়ে কিছু বলেনি। থানা বিএনপির কোন নেতাকর্মী সেখানে যায়নি। তবে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে যারাই এসব কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে সমিতির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন পাটোয়ারীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সমিতির সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন খান বলেন, কোন অনিয়ম কিংবা চাঁদাবাজির অভিযোগে নয়, পল্লীর কিছু বাসিন্দাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জিয়াউল হককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।