পারিবারিক সুত্রে জানা যায় মরহুম আলহাজ্ব হারুনুর রশিদ খান ১৯৩৪ সালের ১লা নভেম্বর চাঁদপুর সদর উপজেলার তৎকালীন আশিকাটি ইউনিয়নের সফরমালী গ্রামের মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন ,তার পিতার নাম আলহাজ্ব সেকান্তর খান। চাঁদপুর সদরের কৃতী সন্তান মরহুম হারুন -অর- রশিদ ২০০৩ সালের ৫ নভেম্বর ৯ রমজান ঢাকার ইন্দিরা রোডস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।
প্রতি বছর ৫ নভেম্বর তার পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুবার্ষিকী ও ৯ রমজান তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া আয়োজন করা হয়। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বিশিষ্ট রাজনৈতিবীদ চাঁদপুরের কৃত সন্তান মরহুম আলহাজ্ব মিজানুর রহমান চৌধুরী’র অনুপ্রেরণায় রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। চাঁদপুর-৩ আসনের দু’দুবার নির্বাচিত সাবেক সফল সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ হারুন-অর-রশিদ খান চাঁদপুরের একজন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক মুক্তহস্তে দানবীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি চাঁদপুর ও মতলব উপজেলায় বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, স্কুল-কলেজে শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মরহুম হারুন অর রশিদ খান সফরমালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও চেয়ারম্যান পদে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অধিষ্ঠিত থেকে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে ও উন্নয়নে কাজ করে গেছেন।
এখানে উল্লেখ্য যে মরহুম আলহাজ্ব হারুন অর রশিদ খান চাঁদপুর রেলওয়ে হকার্স মার্কেট প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে অন্যতম একজন উদ্যোক্তা ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৬০ সালে সফরমালী উচ্চ বিদ্যালয়কে মেঘনার করাল গ্রাসে পতিত হলে তার বাবা মরহুম আলহাজ্ব সেকান্তর খানের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া মরহুম হারুনুর রশিদ খান সফরমালী বাজারের প্রতিষ্ঠাতা। বাজারের আয় এর অংশ দুস্থ মানবতার সেবা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উৎসর্গ করেছেন যাহা এখন পর্যন্ত চলমান রেখেছে তার সুযোগ্য সন্তানরা। অদ্যবধি জেলার প্রায় শতাধিক মসজিদ মাদ্রাসা উক্ত আয়ে পরিচালিত হয়ে আসতেছে এবং চাঁদপুর জেলার বাজার কেন্দ্রিক শত শত পরিবারের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবন-জীবিকা পরিচালনা করে আসছে।
এছাড়াও তিনি মুন্সিরহাট দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, মুন্সিরহাট কলেজের আজীবন সদস্য, মতলব বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
তার পিতা মরহুম আলহাজ্ব মোঃ সেকান্তর খান এবং মাতা জরিনা খাতুন। ছোটবেলা থেকেই তার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি মনোযোগী ছিল এবং প্রথমেই নারায়ণগঞ্জ তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
১৯৮৮ সালে তিনি সর্ব প্রথম মতলবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকাশে জরিনা বৃত্তি প্রদান প্রকল্প চালু করেন। প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারেও তার এই ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি চাঁদপুর গণি স্কুল হইতে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এলাকার যুবসমাজকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য উৎসাহ প্রদান এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণে সার্বিক সকল প্রকার সহযোগিতা করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে প্রশিক্ষণ নিতে তিনি ভারত চলে যান এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগিতা করেন।
১৯৮২-৮৮ পর্যন্ত বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতি সভাপতি ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ঢাকা’র সদস্য, ১৯৭০-৮৬ সাল পর্যন্ত হাজী মহসিন জনকল্যাণ সমিতির সভাপতি, ১৯৭৮-৮৮ সময়ে ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা সমিতির সহ-সভাপতি ও উপদেষ্টা ছিলেন। হারুন-অর-রশিদ খান পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জে তার ব্যবসা পরিচালনা করে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে যোগদান করেন।
১৯৮৬-৮৮ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচন হন। সংসদ সদস্য কালীন বিভিন্ন সময়ে সকল স্তরে নেতাকর্মীদের ও সাধারণ মানুষের অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। চাঁদপুর জেলায় দল-মত-নির্বিশেষে তিনি ছিলেন সকলের মধ্যমণি ও সততার নিদর্শক ।