মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে গত টানা তিন বছর আলু চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং অনুকূল আবহাওয়া, বাজারে চাহিদা ও ন্যায্যমূল্য পাওয়ার পাশাপাশি ভোজ্য তেল ও গো-খাদ্যের (খৈল) দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকদের সরিষা চাষের আগ্রহ বেড়েছে। এছাড়াও সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ভোজ্যতেল আমদানি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সারা দেশের মতো হাজীগঞ্জেও তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদান বাড়ানো হয়েছে।
এতে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় দেড়গুন পরিমাণ সরিষার চাষ বেশি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের সার্বিক তত্ত¡াবধানে কৃষকদের সরকারি প্রণোদনা ও প্রদর্শণীর কারণে চলতি বছর ১৬৫ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। যার ফলে এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। আশা করা হচ্ছে, অনুকূল আবহাওয়া থাকলে বাম্পার ফলন হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে তারা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, হাজীগঞ্জে প্রতি বছর গড়ে ৪০০-৪৫০ হেক্টরে সরিষা চাষ হয়ে থাকে। গত বছর ৪৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়। সরকার দেশে তেল জাতীয় ফসল শতকরা ২০ ভাগ থেকে ৪০ ভাগে উর্ণীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সে লক্ষ্যে হাজীগঞ্জেও ৪৮০ হেক্টর থেকে বাড়িয়ে ৬৪০ হেক্টরে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। আর চাষ হয়েছে ৬৪৫ হেক্টর জমিতে।
উপজেলার কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তির্ণ মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য। সরিষা গাছগুলো পৌষের হিম-শীতল বাতাসে দোল খাচ্ছে আর গুণগুণ শব্দে ফসলের েেত এক ফুল থেকে আরেক ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। এ যেন হলুদের রাজ্যে মৌমাছির রাজত্ব। সেখানে ফুলের মৌ-মৌ গন্ধে এবং মৌমাছির গুঞ্জনে ভিন্নরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে।
এ সময় কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, আলু উৎপাদনে অধিক খরচ এবং দাম কম হওয়ায় এবছর আলু ছেড়ে সরিষা চাষে ঝুঁকছেন তারা। এছাড়া গত তিন বছর বিশেষ করে গত বছর টানা এবং দ্বিতীয় বার বৃষ্টির কারণে আলু চাষীরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর তুলনামূলক অনেক কম পরিশ্রম ও কম উৎপাদন খরচের কারণে এবং কৃষি অফিসের পরামর্শে চলতি বছর অনেক কৃষক সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
মিজানুর রহমান নামের একজন কৃষকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আলুচাষ করে লোকসানে পড়ার কারণে তারা আগাম জাতের সরিষা চাষ করেছেন। এ ছাড়াও সরিষা উৎপাদনে সার কম প্রয়োগ করতে হয় এবং সেচ, কীটনাশক ও নিড়ানীর প্রয়োজন হয় না। এতে খরচ কম ও স্বল্প সময়ে চাষ হয়।
অপর এক কৃষক জানান, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় সরিষার চাষ ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলনও ভালো হবে। সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর বেশি করে সরিষা চাষ করেছেন তিনি। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় এবং অনুকূল আবহাওয়ায় তাঁদের মতো আরও অনেক কৃষক সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন। তিনি বলেন, সরিষা থেকে তেল ও গবাদিপশুর খাবার হিসেবে খৈল হয়। সবুজ পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভোজ্যতেলের আমদানি কমিয়ে আনবে। সে লক্ষ্যে মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবেই দেশে সরিষাসহ তেল ফসলের আবাদ বাড়ানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, এবছর হাজীগঞ্জে ৬৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৬৫ হেক্টর বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলনও ভালো হবে।
তিনি আরো বলেন, সরিষাসহ ধান, আলু এবং অন্যান্য কৃষি পন্যের উৎপাদন বাড়াতে এ বছর ৫ হাজার ৭৫০ জন কৃষককে সরকারি প্রনোদনা (সার ও বীজ) দেওয়া হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৮৫৭ জন বেশি। এছাড়াও কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।