তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এ সংঘর্ষ ঘটে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ব বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে কাউসার হোসেন আপনের সাথে নুসরাত সুরভি নামের এক শিক্ষার্থীর কথা কাটাকাটি হয়। সুরভির স্বামী রিয়াজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
কথা কাটাকাটির বিষয়টি সুরভি রিয়াজকে জানালে রিয়াজ তার হলের বন্ধুদের অবগত করে। পরে সোমবার ইফতার শেষে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে বিষয়টি নিয়ে আপনের কাছে জবাবদিহি চান ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের শিক্ষার্থী রবিন হোসেন ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আলভির ভূইঁয়া। কথা বলার এক পর্যায়ে তারা আপনকে ‘ক্যাম্পাসে পাকনামি কম করিস’ বলে কয়েকটি থাপ্পড় দেয়। আপন বিষয়টি তার বিভাগের সিনিয়র ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সেলিম আহমেদ, আরিফ ও তার বন্ধু গালিবকে জানালে তারা রবিনের কাছে বিষয়টি জানতে প্রধান ফটকের সামনে যান। এসময় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের রবিন, আলভির, শরীফ, শাহিন, সবুজ, জামিল, ইয়াসিনসহ কয়েকজনের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সেলিম, আরিফ, গালিব ও মুজাহিদ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও শাখা ছাত্রলীগের নেতারা উপস্থিত হয়ে সবাইকে হলে চলে যেতে বলেন। কিছুক্ষণ পর দুই পক্ষকে ক্যাম্পাস গেটে মীমাংসার জন্য ডাকলে সেখানে ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এসময় দুই হলের সিনিয়র নেতাদের উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়। পরে দুই গ্রুপকে হলে ফিরে যেতে বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্ত্বর ও মুক্তমঞ্চে আবারও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে উভয় গ্রুপ। পরে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ প্রক্টরিয়াল টিম উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষকে হলে পাঠিয়ে দেয়। এঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাস থমথমে।
এর আগেও বাসে সিট রাখাকে কেন্দ্র করে নুসরাত সুরভি ও তার স্বামী রিয়াজের সাথে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল রানার কথা কাটাকাটি হয়। পরে রিয়াজ তার দলবল নিয়ে সোহেলকে মারধর করে। তথন সোহেলকে আহত অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়।
এ বিষয়ে কাউসার হোসেন আপন বলেন, ইফতারের পর রবিন ও আলভির আমার কাছে এসে থাপ্পড় মারতে থাকে। আমি বিষয়টি আমার সিনিয়র ও বন্ধুদের জানালে তারা ওদের সাথে কথা বলতে যায়। এসময় তারা আবারও আমাদের মারধর করেন।
আলভির ভূইঁয়া বলেন, ক্যাফেটেরিয়ার সামনে আপনের সাথে ধাক্কা লাগলে তাকে কোন ব্যাচ জিজ্ঞেস করলে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় সে আমার শার্টের কলার ধরলে আমরা দুজন তাকে থাপ্পড় দেই। পরে বঙ্গবন্ধু হলের সেলিমসহ কয়েকজনের সাথে হাতাহাতি হয়।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, তুচ্ছ একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হয়েছিল। সেটা মীমাংসা করতে গেলে একটা গুজব উঠে কিছু হট্টগোল হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বসেছি। এর পিছনে যাদের সংশ্লিষ্টতা থাকবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমরাসহ প্রক্টরিয়াল টিম প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম। শিক্ষার্থীদের হলে পাঠিয়ে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মোকাদ্দেস উল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমরা দেখেছি। আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছি।
প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমরা প্রক্টরিয়াল টিম ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এখন যেহেতু উভয় পক্ষ উত্তেজিত, তাই আজকে আর বসবো না। প্রক্টরিয়াল টিম উভয় পক্ষের সাথে বসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।