মনিরুল ইসলাম মনির:
কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাকারী তাল গাছ। মতলব উত্তর
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন ও পরিবেশ রক্ষা ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ
মোকাবিলায় সরকার তাল গাছ রোপণ করছেন। অপরদিকে বিভিন্ন এলাকায় তালগাছ কাটছেন
করাতকলের মালিক ও কাঠ ব্যবসায়ীরা। এক শ্রেণির মানুষ কাটার মহোৎসবে মেতে উঠেছে। নানা
কারণ দেখিয়ে রাস্তার পাশের ও ব্যক্তি মালিকানাধীন তাল গাছ কেটে বিভিন্ন করাতকলে বিক্রি
করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তাল ও নারিকেল গাছ দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও বজ্রপাত প্রতিরোধে
গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য রক্ষা ও শোভাবর্ধনেও তাল ও নারিকেল গাছের
জুড়ি মেলে না। একটা সময় বিভিন্ন সড়ক ও মহা-সড়কের পাশে সারি-সারি তাল গাছ শোভা
পেতে দেখা গেছে।
এখনও দু’একটা তাল গাছ গ্রাম-গঞ্জের ঝোপ-ঝাড়ে দেখা গেলেও তা রক্ষায় নেই তেমন কোনো
উদ্যোগ। অতীতে অ-পরিচিত মানুষের বাড়ি, জমি, পুকুর, মাঠ, মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল,
কলেজসহ বিভিন্ন স্থান দেখানোর জন্য বলা হতো উঁচু ওই তাল গাছটার পাশে। এমনকি সরকারি
বা বেসরকারিভাবে নানাদিক নির্দেশনার ক্ষেত্রেও তাল গাছের সহায়তা নেয়া হত।
তালের পিঠা, তালের গুড়, তালের রস, তালের শাঁস সব মানুষের খুব মজাদার খাবার। বিশেষ করে অতীত
সময়গুলোতে গ্রাম-বাংলায় তালের পিঠা ছাড়া আত্মীয়তা কল্পনাই করা যেত না। এছাড়া তাল
গাছের পাতা দিয়ে তৈরি হয় নানা রকমের হাত পাখাও। ক্রমশই তাল গাছ হারিয়ে যাওয়ায় গ্রামীণ
পরিবারগুলোতে নেই সেই তালের পিঠার অস্তিত্ব।
স্থানীয়রা কৃষকরা বলেন, যেভাবে তাল গাছ কাটা হচ্ছে, সেভাবে তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে না।
বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাল ও নারিকেল গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে করাতকলে। পরিবেশ ও জীব-
বৈচিত্র্য সুরক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে তাল গাছ রোপণের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
গ্রামবাংলার অধিকাংশ বাড়ি, রাস্তা ও মাঠে এক সময় প্রচুর পরিমাণ তালগাছ দেখা যেত। তবে
কালের পরিক্রমায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী তালগাছ। তবে এখন আর তেমন দেখা
মেলে না তালগাছ। বাবুই পাখির বাসার হাজার হাজার বাবুই পাখির কইছির-মিচির ডাকের
মনোরম দৃশ্যও চোখে পড়ে না আর।
তাই বর্তমানে দূর থেকে ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁ, খান মুহাম্মদ মইনুদ্দীনের
সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না। এই দৃশ্য এখন কল্পনাতেই রয়ে গেছে।