চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় দাদীকে জমি বিক্রি করে হজ্জ করিয়েছিন চাচা। আর ওই বিক্রিত সম্পত্তির সমান ভাগ পেতে চাচার বসতঘর ও রান্নাঘর জোড়পুর্বক ভেঙে নিল ভাতিজা। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) ভোরে এ ঘটনার পর চাচা মানিক মিয়ার স্ত্রী রাবেয়া বেগম বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বিবাদী করা হয়, মো: কামাল হোসেন (২৯), মো: কাউছার (২৭), উভয় পিতা: মালেক প্রধান, মোঃ মালেক প্রধান (৭০), পিতা: মৃত- জিয়া উদ্দিন প্রধান, লাইলী বেগম (৫৫), স্বামী: মালেক প্রধান, সর্বসাং- পশ্চিম নাউরি, হেলাল উদ্দিন (৫০), পিতা মৃত- মকরম মোল্লা, জাকির হোসেন (৪৫), পিতা মৃত- শহিদুল্যাহ বেপারী, মোঃ শামীম (৪০), পিতা: মৃত শহিদুল্যাহ বেপারী, গ্রাম বাজার নাউরি, মোঃ জিলানী (৩০), পিতাঃ অজ্ঞাত, মোঃ মাহফুজ (৩০), গ্রাম বড় হলদিয়া, আবু হানিফ (২৬), পিতা নূরুল ইসলাম, গ্রাম দক্ষিণ নাউরি সহ আরো অজ্ঞাতনামা কয়েকজন।
অভিযোগে বাদীনি উল্লেখ করেন, নাউরী গ্রামে আমার পুরাতন বসত বাড়ী ও আমার ২ টি দো-চালা টিনের ঘর বিদ্যমান আছে। আমি গত ৩/৪ বছর ধরে উল্লেখিত ঘটনাস্থল হইতে অনুমান ২০০ গজ পূর্ব-দক্ষিন কোনে নতুন বসত বাড়ী নির্মান করিয়া স্ব-পরিবারে বসবাস করিয়া আসিতেছি। আমি স্ব-পরিবারে নতুন বাড়ীতে বসবাস করায় ২ ও ৩নং সাক্ষীকে আমার ঘটনাস্থলের ০২ টি ঘরের মধ্যে ০১ টি দো-চালা টিনের ঘরে অস্থায়ীভাবে থাকতে দেই। আমি নতুন বাড়ীতে সকল আসবাব পত্র নতুনভাবে ক্রয় করিয়া বসবাস করায় আমার পুরাতন বাড়ীর সকল আসবাবপত্র আমার পুরাতন বসত ঘরে থাকে। বিবাদীদের সহিত আমাদের পূর্ব থেকে জায়গা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলমান। উক্ত বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষে বিজ্ঞ আদালতে একাদিক মামলা বিচারাধীন আছে। বিবাদীরা বিজ্ঞ আদালতের তোয়াক্কা না করিয়া আমাদের পুরাতন বাড়ী জোর দখল করার অপচেষ্টায় থাকে। গত ৭/৮ দিন আগে বিবাদীরা আমাদের পুরাতন বসত ঘর হইতে ২ ও ৩নং সাক্ষীকে জোর পূর্বক বাহির করিয়া দিয়া বসতঘর জোরদখল করার চেষ্টা করে এবং বসতঘর ভাংচুর করে। তখন স্থানীয়ভাবে বিচার শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি আপোষ মিমাংসা করার চেষ্টায় থাকি। এরই মধ্যে ঘটনার মঙ্গলবার সকালে বিবাদীরা পরিকল্পিতভাবে ঘটনাস্থলে আমার বসতঘর হইতে ২ ও ৩নং সাক্ষীকে জোর পূর্বক বাহির করিয়া দিয়া বসতঘর ভাংচুর করিয়া আমাদের ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ০৪ টি কাঠের খাটিয়া, ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১ টি কাঠের আলমিরা, ২০ হাজার টাকা মূল্যের ৪ টি সিলিং ফ্যান, ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ১ ফ্রিজ, ১টি ডাইনিং টেবিল, ৮টি চেয়ার এবং নতুন ১০ বান্ডেল টিন, ২ টি স্মার্ট মোবাইল ফোন ও নগদ ১ লাখ টাকা নিয়ে গেছে।
বাদী বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমি সহ আমার ছেলে ১নং সাক্ষী মো: জাহিদ হাসান ঘটনাস্থলে যাইয়া বিবাদীদেরকে বাধা দিতে গেলে বিবাদীরা ক্ষিপ্ত ও উত্তেজিত হইয়া আমাদেরকে ঠেলাধাক্কা দেয় ও মারধর করার জন্য উদ্যত হয় এবং বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। বিবাদীদের মারমুখি আচরণ দেখে আমরা প্রাণে ভয়ে ঘটনাস্থল হইতে চলিয়া আসি। আমাদের শোরচিৎকারে উপরোক্ত অপরাপর সাক্ষীরা সহ আশপাশ হইতে আরো লোকজন ঘটনাস্থলে আসিয়া উক্ত ঘটনা দেখে। বিবাদীরা প্রকাশ্যে হুমকী দিয়ে বলে আমি যদি কখনো ঘটনাস্থলে আমার পুরাতন বাড়ীতে যাই কিংবা উক্ত ঘটনার বিষয়ে কোন মামলা মোকদ্দমা করি, তাহলে আমাকে সহ আমার পরিবারের লোকজনকে সময় সুযোগমত পাইলে খুন করে লাশ গুম করে ফেলবে।
বাদীনি আরও বলেন, আমার স্বামী আমার শ্বাশুড়িকে জমি বিক্রি করে হজ্জ করিয়েছেন। ওই বিক্রিত জমির সমান সমান ভাগ চায় বিবাদীগণ। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা আমার দুইটি ঘর ভেঙ্গে নিল। আমি আমার ঘর ফেরত সহ আইনের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই। এদিকে বিবাদী কামাল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ওখানে আমার জায়গা আছে তাই ঘর ভেঙ্গে নিয়েছি।
মানিক মিয়ার বোন তাহমিনা বেগম বলেন, আমার বড় ভাই মালেক আমার মাকে ভোরন পোষণ দেয় না। ২০ বছর ধরে আমার মায়ের সম্পূর্ণ খরচ চালায় আমার ছোট ভাই মানিক। জমি বিক্রি করে আমার মাকে হজ্জ করিয়েছে। এজন্য বড় ভাইয়ের ছেলেরা মানিক ভাইয়ের পরিবারের উপর এমন অত্যাচার নির্যাতন করছে। মানিকের বৃদ্ধা মায়েরও একই ভাষ্য।