প্রতিবছর বর্ষায় এলেই প্রায় সময় বন্ধ থাকে শারিরিক কসরতসহ কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের খেলাধূলা। এছাড়া জমে থাকায় সেই পানি যখন নোংরা পানিতে পরিনত হয়, তখন মশা ও পোকা-মাকড় জন্মে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে বসাটা দুরুহ হয়ে পড়ে। তাছাড়া স্থানীয় ও এলাকার শিশু-কিশোরদেরও বৈকালিন সময়ের খেলাধূলা বন্ধ থাকে। বলছি, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৮নং ওয়ার্ড টোরাগড় গ্রামের স্বর্ণকলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা।
জানা গেছে, ১৯৯৫ইং সালে টোরাগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও অত্র ক্যাম্পাসে রয়েছে প্রায় ৩৫ বছরের পুরানো উপজেলার প্রথম ও তৎকালীন সময়ে একমাত্র প্রতিষ্ঠিত স্বর্ণকলি কেজি স্কুল এবং ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হাজীগঞ্জ স্বর্ণকলি হাই স্কুল। তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
সরজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত খেলাধুলা ও শারিরিক কসরতসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিযোগিতা (খেলাধূলা), সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তাছাড়া এ মাঠে স্থানীয় ও এলাকার শিশু-কিশোরেরা প্রতিদিন খেলাধূলা করে। কিন্তু বর্ষাকাল এলেই প্রায় সময় খেলাধূলা থেকে বঞ্চিত হয় তারা। এ মাঠটিসহ আশপাশের বাড়ি উঠান ও রাস্তায় হাঁটু পানি জমে থাকে।
বিশেষ করে টানা তিনচার দিন বৃষ্টি হলেই এমন অবস্থা দেখা যায়। বিদ্যালয় তিনটির ক্যাম্পাস কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে প্রায় ১ ফুট নিচু অবস্থানে এবং বিদ্যালয়ের আশ-পাশের পুকুরসহ বিভিন্ন নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। এছাড়াও হামিদিয়া জুট মিলসের পিছনের দিঘীটি (বড় পুকুর) ভরাট হয়ে যাওয়ায় গত দুই-তিন বছর ধরে বর্ষা এলেই এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের।
স্থানীয় একজন অভিভাবক ও ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, আশপাশের বাড়িগুলো থেকে বিদ্যালয়ের মাঠ নিচু। এলাকার পুকুর ও নালাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া পানি নিস্কাশন হচ্ছেনা। ফলে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলেই মাঠটিতে পানি জমে যায়। তিনি বলেন, প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবরের কিছু সময় পর্যন্ত মাঠটি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। তাই মাঠ ভরাটসহ পানি নিস্কাসনের জন্য প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের পিটিআই কমিটির সভাপতি জহির আহমেদ জহির জানান, মানবসৃষ্টের কারণেই এই জলাবদ্ধতা। পুকুর, ডোবা ভরাট করে বসতবাড়ি স্থাপন হওয়ায় বৃষ্টির পানি নামার পথ নেই। যার ফলে স্কুল মাঠসহ আশপাশের বাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে মাঠ ভরাটসহ বর্ষার পানি নিস্কাসনে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পৌর মেয়রের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনিসহ এলাকার লোকজন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল জানান, গত দুই বছর ধরে জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মাটি দিয়ে ভরাট করা ছাড়া মাঠের এই জলাবদ্ধতা দূর করা যাবে না। তাই মাঠটি উঁচু করতে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের পরামর্শক্রমে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করবেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, মাঠটি অনেকটা নিচু। তাই প্রতি বছর বর্ষা এলেই মাঠটিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য মাঠ ভরাটের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা অবহিত করেছি। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে আমরা আবারো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো এবং পানি নিস্কাশনে পৌর মেয়র মহোদয়ের প্রতি অনুরোধ রাখবো।
এ বিষয়ে পৌর ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী মো. কবির হোসেন কাজী বলেন, গত দুই তিন দিনে আমি বেশ কয়েকবার এবং আজকেও (মঙ্গলবার) দুই/তিনবার ওই এলাকায় গিয়েছি। সমস্যা হচ্ছে, যে স্থান দিয়ে পানি নিস্কাশন হয় ওই স্থান ও নদীর পানির অবস্থান একই রকম হওয়ায়, পানি আটকে আছে।
আগামিতে এ সমস্যা (জলাবদ্ধতা) থাকবেনা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন মহোদয়ের আমাদের জন্য বিশাল বরাদ্দ দিয়েছেন। পৌর ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে এই প্রক্রিয়া অনেক এগিয়েছে। আশাকরি শিঘ্রই কাজ শুরু হবে।