সরকারি কিংবা বেসরকারি। চাকরি অনেকেই করেন এবং করছেন। কেউ গতানুগতিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, আবার কেউ কর্মের প্রতি একাগ্রতা ও দায়িত্বের প্রতি নিষ্ঠাবান থেকে মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন। এজন্য তিনি নিজে খাঁটছেন, পাশাপাশি অধনস্তদের খাঁটাচ্ছেন। তবে কারো মনে কষ্ট দিয়ে নয়, সবাই আনন্দচিত্তেই সেই খাঁটুনি করে যাচ্ছেন। বিনিময়ে সাধারণ মানুষ উপকার পাচ্ছেন এবং উপকৃত হচ্ছেন।
এজন্য তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, অধনস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সেবাগ্রহিতাদের সাথে রেখেছেন সু-সম্পর্ক। বলছি, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফার কথা। তিনি গত বৃহস্পতিবার বদলীজনিত কারণে হাজীগঞ্জ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছেন। আর গতকাল রোববার (১২ নভেম্বর) গাজীপুর জেলার টঙ্গি থানায় একই পদে যোগদান করেছেন।
তার এ বিদায় যেন সহকর্মী ও সেবাগ্রহিতারা মেনে নিতে পারছেনা। কারণ, তিনি সহকর্মীসহ সাধারণ জনগণের হৃদয়ে প্রিয়ভাজন হিসাবে এক অনন্য স্থান করে নিয়েছিলেন। সেজন্য বিদায় বেলায় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অশ্রুসিক্ত ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট দিয়ে তাঁকে বিদায় দিতে হয়েছে। তিনিও অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেছেন, হাজীগঞ্জবাসীকে সারাজীবন মনে রাখবেন এবং তাঁর মনে থাকবে।
জানা যায়, ২০০৯ সালের ৫ অক্টোবর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসাবে হাজীগঞ্জে যোগদান করেন মো. গোলাম মোস্তফা। যোগদানের পর থেকে তিনি কখনো সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করেন নি। সকলকে নিজের আপন মানুষ ভেবে কাজ করেছেন এবং সবাইকে এক নজরে দেখেছেন। তাই, দীর্ঘ সময়ে তিনি অনেক স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেন নি।
অবশেষে কিছু সংখ্যক জনবল পেয়ে ২০১৭ সাল থেকে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ‘প্রেগনেন্ট মাদার কেয়ার এ্যাপস’, ‘নিরাপদ মাতৃত্বে আমরা সবাই’, ‘আলোকিত কিশোর-কিশোরী’, ‘আজকের সুস্থ কিশোরী ও নিরাপদ মাতৃত্ব আগামি দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ’ এবং ‘নাইওর’ নামের ইনোভেশন কাজ করে তিনি ব্যাপক সাড়া ফেলে দেন। এর মধ্যে ‘প্রেগনেন্ট মাদার কেয়ার এ্যাপস’ এর জন্য তিনি জনপ্রশাসন পদক লাভ করেন।
পাশাপাশি জেলা ও উপজেলায় পেয়েছেন একাধিকবার শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার। মো. গোলাম মোস্তফার নিজস্ব উদ্যোগে এই ইনোভেশন কাজগুলো করার কারণে বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছেন, গর্ভবতী মায়েরা। নিয়মিত উঠান বৈঠক, চেকআপ, তদারকি ও নরমাল ডেলিভারির কারণে মায়েরা শারিরিক ও মানসিক এবং পরিবার অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে মুক্তি এবং সুস্থ মা ও শিশু পেয়েছেন। এতে কিছুটা হলেও কমে এসেছিল সিজারীয়ান মায়ের সংখ্যা।
তিনি প্রেগনেন্ট মাদার কেয়ার এ্যাপসের মাধ্যমে উপজেলার সকল গর্ভবর্তী মায়েদের তালিকা করেন। এই তালিকায় মায়েদের সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিন-তারিখ উল্লেখ ছিল। সেই দিন-তারিখের সূত্র ধরেই প্রসবকালীন জটিলতা ও ঝুঁকি এড়াতে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসবত্তোর সেবা কার্যক্রম শুরু করেন। তার আগে উপজেলার সকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোকে ২৪/৭ ডেলিভারির উপযোগী করে তুলেন।
যেহেতু বদলীযোগ্য চাকরি। একই কর্মস্থলে বেশিদিন থাকার সুযোগ নেই। যেতে তাঁকে হবেই। তাইতো চলে গেলেন, রেখে গেলে তাঁর কর্ম। তিনি তাঁর এ কর্মের মধ্য দিয়েই অনেকদিন প্রিয়ভাজন হিসাবে উপজেলাবাসীর হৃদয়ে থাকবেন। পরবর্তীতে যিনি আসবেন, তিনি যেন মো. গোলাম মোস্তফার কাজগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তাঁর মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে সেসব কাজকে আরো বেগবান করেন সেই আশা ও প্রত্যাশা সবার।
সরকারি চাকুরিজীবী হিসেবে বদলিজনিত কারণে কোনো জেলায় বা উপজেলায় স্থায়ী হওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে এক প্রতিক্রিয়ায় মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার কর্মজীবনে সেরা সঞ্চয় পেয়েছি আপনাদের ভালোবাসা। দীর্ঘদিন এই উপজেলায় ছিলাম। কর্মরত অবস্থায় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকসহ সকলের সার্বিক সহযাগিতা পেয়েছি। ভালো থাকুক সবাই এই কামনা রইলো।