নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টির কমিটি গঠন নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। কমিটিতে সিনিয়র নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি—এমন অভিযোগ তুলে শুক্রবার মহানগর সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ সময় পাল্টা কমিটি গঠনেরও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। উত্তেজনাকর এ পরিস্থিতির মধ্যে এদিন মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ১৭টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা। তালিকা প্রকাশের পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পদবঞ্চিতরা। এ ইস্যুতে এক হন এমপি শামীম ওসমান ও মেয়র আইভীপন্থী উভয় বলয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন তাঁরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি আইভী দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিজ ওয়ার্ডে (১৬ নম্বর) বৈঠক করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তিনি।
মেয়র আইভীর ঘোষণার পর একই সুরে বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। বৈঠক শেষ হওয়ার পর ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এসে তালা ঝুলিয়ে দেন। একই সঙ্গে কার্যালয়ের বাইরে থাকা মহানগর সভাপতি আনোয়ার হোসেনের ছবির ওপর ক্রস চিহ্ন এঁকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
কমিটি প্রসঙ্গে আইভী বলেন, ‘আনোয়ার কাকা প্রতিহিংসার মনোভাব নিয়ে এই কমিটি দিয়েছেন। তিনি দেওভোগকে (১৬ নম্বর ওয়ার্ড) বুঝিয়েছেন, উনি যা চাইবেন, তা-ই হবে এখানে। যেই দেওভোগে পূর্বপুরুষেরা নেতৃত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের, তাঁদের অসম্মানিত করেছেন তিনি। আজকে এখানে দাঁড়িয়ে দেওভোগের মানুষ হিসেবে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম আমি। খোকন সাহেব ও আনোয়ার সাহেব আমার হাতে গড়া। সবাই আগের কথা ভুলে গেছে। এই কমিটি আমরা মানব না।’
মেয়র আইভী বলেন, ‘সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে কমিটি হয় নাই। কারণ, সেটা এমপি শামীম ওসমানের এলাকা। তিনি বলেছেন, তাঁর এলাকায় তাঁর নিজের মতো কমিটি করবেন। তাহলে বলতে চাই, আমার নির্বাচনী এলাকা ২৭টি ওয়ার্ড। তাহলে কোনো অধিকারে আপনারা আমাকে জিজ্ঞেস না করেই ১৭টি ওয়ার্ডে কমিটি দেন? আমি ১৭টি ওয়ার্ডে পাল্টা কমিটি দেব। এক ওয়ার্ডের লোক এনে আরেক ওয়ার্ডে বসিয়েছেন। এগুলো কি ছেলেখেলা নাকি?’
শামীম ওসমানপন্থী হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক হুমায়ুন কবীর মৃধা বলেন, ‘বন্দরের ওয়ার্ড কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এর মধ্যে রাজাকারের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীর সন্তান আছে, ওয়ান ম্যান শো নেতা আছে। গত ৮-৯ বছর যাঁদের দিয়ে প্রোগ্রাম করিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার কোনো মতামত নাই। উনি (আইভী) যেটা ভালো মনে করেছেন, সেটা করেছেন। আমার যেটা করার, সেটা আমি করেছি। তিনি বয়সে আমার অনেক ছোট। যাঁরা এসব কথা বলেছেন, তাঁরা কিছুটা ক্ষোভের বশে বলেছেন। সে জন্য আমাকে প্রত্যুত্তর দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।’