রিয়াজ শাওনঃ
হাজিগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো রাশেদুল ইসলাম। উপজালায় যোগদানের পর থেকেই
বহুমুখী কাজের পাশাপাশি মানবিক কাজ করে।হাজিগঞ্জ উপজেলার মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছে।প্রশংসিত হচ্ছেন সর্বমহলে।
তিনি সাধারণ মানুষের কাছে মানবিক ইউএনও হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। জননন্দিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ রাশেদুল ইসলাম এর একটি ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক রিয়াজ শাওন।
আরকেনিউজ৭১ঃ কেমন আছেন?
রাশেদুল ইসলামঃ জি ভালো আছি।
আরকেনিউজ৭১ঃ চাঁদপুর জেলায় যোগদানের পূর্বে এ জেলা সম্পর্কে কেমন ধারণা ছিল ?
রাশেদুল ইসলামঃ আসলে তেমন ধারনা ছিল না তবে একটা ধারনা ছিল ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর । এখানে খুব ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। এর বাইরে আর কোন ধারণা ছিল না।
আরকেনিউজ৭১ঃ অতীতের ইউএনও তুলনায় আপনার কাছ থেকে ব্যতিক্রমধর্মী কি কাজ দেখবো?
রাশেদুল ইসলামঃ ব্যতিক্রম কোন কাজ না। সবার কাজেই ব্যতিক্রম। তবে হয় তো তারা এক ভাবে কাজ করেছে। আমি আরেকভাবে কাজ করেছি।
আরকেনিউজ৭১ঃ হাজিগঞ্জে যোগদানের পূর্বে হাজীগঞ্জ সম্পর্কে যে ধারণা ছিল বাস্তব এসেছে যে ধারণা ফেলেন তার পার্থক্য কি?
রাশেদুল ইসলামঃ আসলে হাজিগঞ্জ যোগদানের পূর্বে হাজীগঞ্জ নিয়ে আমি তেমন কিছু ভাবি নি যে হাজীগন এমন বা ওরকম। হাজিগঞ্জ সম্পর্কে ধারণাও ছিল না। বা আমি ভাবিও না।
হাজিগঞ্জ আসার পূর্বে ভেবেছি হাজিগঞ্জ থেকে আমি শুরু করব নতুন করে।
যদি বলেন এখান থেকে আমি কাজ শুরু করেছি আর কাজ শুরু করতে পেরে আমারও ভালো লাগছে ভালো লাগার কারণ যদি বলেন যে আমি আসলে কাজ করতে চেয়েছি একেবারে ফিল্ড লেভেলের মানুষের সাথে। প্রকাশ করতে যখন গেলাম তখন দেখলাম মানুষের মাঝে একজনের উৎসাহ আছে মানুষ চায় সরকারি সেবা সম্পর্কে জানতে চাই। এই কাজটা যখন করতে গেলাম মানুষের উৎসাহ যখন পেলাম তখন আমার কাছে খুব ভালো লাগলো।
আরকেনিউজ৭১ঃ হাজীগঞ্জ যোগদান করার পর এখানকার কি কি সমস্যা আপনার চোখে পড়েছে।
রাশেদুল ইসলামঃ আসলে এই সমস্যা পুরো বাংলাদেশের। তবে সমস্যার কথা যদি বলেন, তাহলে বলবে এখানে সংস্কৃতির চর্চা টা একেবারে সীমিত। এছাড়াও যদি ছাত্র-ছাত্রীদের কথা বলি তাদের পড়াশোনার বাহিরে সহশিক্ষা কার্যক্রম এর একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মাদকের একটি সমস্যা রয়েছে এখানে।
এছাড়াও রাস্তাঘাটের হয়েছে ভবিষ্যতে আরো হবে তবে এখানে রাস্তাঘাটের কিছু সমস্যা রয়েছে। আর এখানে বিনোদন কেন্দ্রের খুব অভাব। বিনোদন কেন্দ্র বলতে বুঝে রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করা। আমি এখানে যোগদানের পূর্বে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম হাজীগঞ্জ কেমন? সে বলবো অনেক উন্নত। আমি বলাম কেমন উন্নত। সে বল্লো হাজীগঞ্জে একটা বড় বাজার আছে। আমি মনে করি একটি বাজার কখনো একটি জায়গার উন্নায়েনর চিত্র হতে পারে না।
এটা একটা ভুল ধারণা যে, আমাদের বড় একটা বাজার আছে তার মানেই জায়গাটা খুব উন্নত। আমি
উন্নয়ন বলতে এমন একটি জায়গাকে বুঝাছি।
যেখানে বিকালে বের হওয়া যায়। বাচ্চারা খেলতে পারে খোলামেলা পরিবেশ শান্ত নিরিবিলি একটি জায়গা সময় কাটানোর মত উপযুক্ত একটি পরিবেশ থাকবে। সেটাই মূলত উন্নয়ন ও উন্নত।
আরকেনিউজ৭১ঃ আপনি যখন হাজিগঞ্জ থেকে চলে যাবেন কেমন হাজিগঞ্জ করে যেতে চান?
রাশেদুল ইসলামঃ এটা খুব কঠিন তবে এমন কোনো পরিকল্পনা আমি করিনা বা রাখিনা। যেমন হাজিগঞ্জকে এমন করে রেখে যেতে চাই । তবে আমি একটা জিনিস চিন্তা করি। আমি যতদিন কাজ করব ততদিন যেন আমি এখানে কাজ করে মানসিক শান্তি টা পায়। আরে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় তখনই যখন কাজটা আমি যে চিন্তা করেছি তার বাহিরে না হয়। আমি যে কাজটাই করব মনের মধ্য থেকে আনন্দ নিয়ে কাজটা করব।
আরকেনিউজ৭১ঃ আপনি হাজীগঞ্জের যোগদানের পরে থেকেই এখানকার সাধারণ মানুষের আপনাকে ভীষণ পছন্দ। যা সচারাচর দেখা যায় না। এর পিছনে রহস্যটা কি? আর এই বিষয়টা আপনি কি ভাবে দেখেন?
রাশেদুল ইসলামঃ বিষয়টা আমার কাছে ভাল লাগে। কারণ আমরা হিউম্যান বিং মানুষ এটু প্রশংসা করলে খুশি হই। প্রশংসা শুনতে আমারও ভালো লাগে। খারাপ লাগেনা। একই সাথে তেমনি একটি প্রত্যাশার চাপও থাকে। আমার কাছে মনে হয় আমি চেষ্টা করেছি আমার রুমের বেরিয়ার ভাঙতে। সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে। মানুষের কথা শুনতে। সেই জন্যই মানুষ ভালোবাসে। মানুষের ভালোবাসা কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়।
আরকেনিউজ৭১ঃ এত পেশা থাকতে আপনি প্রশাসনে চাকরি কেন?
রাশেদুল ইসলামঃ প্রশাসনে কাজ করা পরিধিটা ব্যাপক। প্রশাসনে থাকার সুবিধা হচ্ছে আপনি মানুষের সাথে ডিরেক্টলি যোগাযোগ করতে পারেন। মানুষের সাথে সরাসরি কথা পারেন মানুষের সাথে সরাসরি মিশতে পারেন।
আরকেনিউজ৭১ঃ হাজিগঞ্জ যানজট নিরসনে আপনি যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেই উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে? আর বাস্তবায়ন হতে কত সময় লাগতে পারে?
রাশেদুল ইসলামঃ এখনো বাস্তবায়ন একটাও হয়নি। এগুলো হচ্ছে আমাদের উদ্যোগ। আর এই উদ্যোগ আমি বাস্তবায়ন করবো এ উদ্যোগের সাথে যারা সম্পৃক্ত সেই স্টেকহোল্ডারদের আমার আগে সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। এর মাঝে পৌরসভা আছে, বাজার কমিটি আছে, থানা পুলিশ আছে । তারপরে স্টেকহোল্ডার রা তারা তারা তাদের জায়গা থেকে কতটুকু কাজ করতে পারবে তাদের সীমাবদ্ধ কতটুকু সেগুলো বিবেচনা করেই আমরা এই উদ্যোগটা বাস্তবায়ন করতে পারব।
আরকেনিউজ৭১ঃ হাজীগঞ্জ যোগদানের পর এখন পর্যন্ত কোন ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা?
রাশেদুল ইসলামঃ না এখন পর্যন্ত আমি হইনি সবাই আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে।
আরকেনিউজ৭১ঃ চাকরির জীবনে একটি আনন্দময় ঘটনার কথা বলুন?
রাশেদুল ইসলামঃ আমি যখন এসিলেন্ট ছিলাম চট্টগ্রামের মিরসরাইতে। তখন সেখানে একদিন এক বৃদ্ধ মহিলা আসলো জমি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে। আমি স্বাভাবিক ভাবে তার সমস্যার শুনলাম এবং একজনকে ট্যাগ করে দিলাম। তারপর সেই মহিলার সমস্যা দু-একদিনের মধ্যে সমাধান হয়ে গেল। তার এক সপ্তাহ পর সে মহিলা আবার আসলো। আমাকে কলা দিবে আমি কলা খেতে হবে। আমি বললাম যে না আমি তো কলা খেতে পারবো না। আমি পরে খাব মহিলার কথাটা আমি এখনই খেতে হবে উনার সামনে খেতে হবে। আর কলাটা কি জন্য নিয়ে আসছে। উনার যে জায়গাটা নিয়ে সমস্যা ছিল ওই জায়গা টুকুর মধ্যে একটা কলাগাছ ছিল আর ওই কলাগাছেই কল হচ্ছে এগুলো যা আমার কাছে নিয়ে আসছে। কলা বা অন্য কিছু দাম খুব কম কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে মানুষটার একটা কলা গাছই ছিল সম্বল।আর সেই খান থেকে তিনি কল নিয়ে এসছে। এই ধরনের মানুষগুলো যখন এভাবে আমাদের কাজকে অনুপ্রেরণা দেয় উৎসাহ দেয় এই জিনিসগুলো আমার কাছে ভালো লাগে।
আরকেনিউজ৭১ঃ আপনার চাকরির জীবনের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলুন?
রাশেদুল ইসলামঃ একটা আমি বলতে পারব না তবে মানুষের যে ধারণা আমি চাইলে অনেক কিছু করতে পারি। এ জন্য মানুষ অনেক আশা নিয়ে আমার কাছে আসে কিন্তু আসলে আমি কিছু করতে পারি না। তারা মন খারাপ করে চলে যায়। এই বিষয়টা আমার কাছে খুব খারাপ লাগে।
আরকেনিউজ৭১কে সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
রাশেদুল ইসলামঃ আরকেনিউজ৭১ অনেক ধন্যবাদ।
ক্যাপশনঃ হাজিগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ রাশেদুল ইসলাম