হাজীগঞ্জ ব্যুরো:
হাজীগঞ্জে এবার চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে আকলিমা আক্তার (২০) নামের এক প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তিনি সংকটাপন্ন বলে পরিবারের সদস্যরা দাবী করেন। গত ১৪ মার্চ হাজীগঞ্জ বাজারস্থ সেন্ট্রাল হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগণস্টিক ল্যাবে উপজেলার হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের পশ্চিম হাটিলা গ্রামের সরানিয়া বাড়ির নবীর হোসেনের স্ত্রী আকলিমা আক্তারের সিজারের মাধ্যমে বাচ্ছা প্রসব করেন।
এরপর বাচ্ছার শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে কুমিল্লায় নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাচ্চাটি মারা যায়। পরবর্তীতে হাসপাতালে চারদিন থাকার পর তাকে ১৮ মার্চ রিলিজ দেওয়া মা আকলিমা আক্তারকে। কিন্তু সিজারের স্থানে সেলাই না করেই হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয় বলে সংবাদকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন তার বাবা আব্দুল মান্নান।
এতে কাটাস্থানে ইনফেকশন হয়। তবে হসপিটাল কর্তৃপক্ষের দাবী, সেলাই করে আকলিমা আক্তারকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সেলাই করা স্থানে ইনফেকশন হলে তাকে পরিবারের লোকজন হাসপাতালে নিয়ে আসে। এরপর সেলাই কেটে নিয়মিত ড্রেসিং করার জন্য রোগীর পরিবারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কয়েকদিন ড্রেসিং করার পর যখন কাটা স্থানে সেলাই দেওয়ার সময় হয়েছে, তখন তারা হাসপাতালে আসেন নি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, আমরা হাসপাতালের পক্ষ থেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা আকলিমা আক্তারকে কুমিল্লা নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন এবং কাটা স্থানে সেলাই করানো হয়েছে বলে আমাদেরকে জানান। যার ফলে আমরা আর খোঁজ-খবর নেইনি। এখন সিজারের প্রায় একমাস পর (১৪ এপ্রিল) পরিবারের লোকজন হাসপাতালে এসে দাবী করেন, সিজারের পর কাটাস্থানে সেলাই করা হয়নি।
এদিকে খবর পেয়ে শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রসূতির মা, বাবা ও নিকট আত্মীয়-স্বজনেরা হাসপাতালে এসে আকলিমা আক্তারের কাটা স্থানে সেলাই না করার কারণে তার অবস্থা মরনাপন্ন (সংকটাপন্ন) জানান। তবে তারা আকলিমা আক্তারকে নিয়ে আসেন নি। তিনি শাহরাস্তির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সংবাদকর্মীদের জানান পরিবারের লোকজন।
এ সময় আকলিমার মা ও বাবা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। টাকার অভাবে মেয়ের ভালো চিকিৎসা করাতে পারছিনা। মেয়েটা ব্যথা ও অসহ্য যন্ত্রনায় সারাদিন কান্নাকাটি করে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম বাবুল অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদকর্মীদের জানান, সিজারের ৫ম দিন আকলিমাকে রিলিজ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বাড়িতে থাকা অবস্থায় সেলাইয়ের স্থানে ইনফেকশন দেখা দিলে, পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমরা কাটাস্থানে নিয়মিত ড্রেসিং করি।
তিনি বলেন, কাটাস্থানের অবস্থার উন্নতি হলে পরবর্তী সময়ে আকলিমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলি। কিন্তু তারা আসেন নি। এমনকি আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, কুমিল্লা নিয়ে তার চিকিৎসা করানো হয়েছে। অথচ সিজারের প্রায় একমাস পরে এসে পরিবারের লোকজন আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
এ সময় তিনি আরো বলেন, তারপরও আমরা বলেছি তাকে (আকলিমা আক্তার) হাসপাতালে নিয়ে আসেন, আমরা তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। কিন্তু পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে আনবেন না বলে আমাদেরকে সাফ জানিয়ে জানিয়ে দেন। তাহলে আপনারাই (সংবাদকর্মী) বলেন, আমরা কি করতে পারি? সবশেষ আপনাদের মাধ্যমে বলছি, তাকে নিয়ে আসলে আমরা উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।