মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ ||
হাজীগঞ্জের গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নসহ পাশর্^বতীয় শাহরাস্তি উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে বালু দিয়ে অবাধে পুকুর ও ডোবাসহ জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। ডাকাতিয়া নদী থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে পাইপ দিয়ে ভরাট করা হচ্ছ্ েএসব পুকুর ও ডোবাসহ ব্যক্তি পর্যায়ের এসব জলাশয়।
২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে ডাকাতিয়া নদী খননের কাজ শুরু হয়। এরপর থেকে দুই উপজেলায় নদীর পাড় সংলগ্ন গ্রাম সমূহে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক পুকুর ও ডোবাসহ এসব জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে টাকার বিনিময়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ের এসব জলাশয় ভরাট হচ্ছে।
জানা গেছে, ডাকাতিয়া নদী ও নৌপথের নাব্য বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৭ সালে তৎকালিন নৌ-পরিবহণমন্ত্রী শাহাজান খান হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে ডাকাতিয়া নদী খনন কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় নদী খননের (ড্রেজিং) বালু দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর ও ডোবাসহ জলাধার ভরাট।
ডাকাতিয়া নদীর হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলার যে অংশে ড্রেজিং হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে, নদীর পাড় সংলগ্ন সেসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব গ্রামের লোকজন তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর, নর্দমা ও ডোবাসহ জলাধারগুলো ভরাট করেছেন। এতে করে গত চার বছরে প্রায় অর্ধ-শতাধিক জলাধার ভরাট হয়েছে।
এই ভরাটের কাজ এখনো চলছে। বর্তমানে হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলার সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীর অংশে এই খনন কাজ চলছে। এতে করে হাজীগঞ্জের গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়ন ও শাহরাস্তির টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের নদীর পাড় সংগল্ন গ্রামগুলোর পুকুর, নর্দমা ও ডোবাসহ জলাধারগুলো অবাধে ভরাট করা হচ্ছে।
দেখা গেছে, ডাকাতিয়া নদী থেকে বালু উত্তোলনে প্রশাসনের কোনো নজরদারি ও সমন্বয় নেই। ফলে সহজেই ভরাটের বালু পাওয়া যাচ্ছে। ড্রেজিংয়ের বালু পাইপের মাধ্যমে নদী থেকে পৌর এলাকা কিংবা ইউনিয়নের যে কোনো জায়গায় নেওয়া যাচ্ছে। রাতারাতি ভরাট হয়ে যাচ্ছে শতকের পর শতক জলাধার।
যখন নদীর যে উপজেলায় অংশে ড্রেজিং হচ্ছে, সে উপজেলার রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে স্থানীয় দুই একজনের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ের এসব জলাশয় ভরাট করছেন লোকজন। এরকম কয়েকজনের সাথে কথা হলে, তারা কম টাকায় ভরাটের সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানান।
অথচ পরিবেশ সংরণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী বলা হয়েছে, যে কোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র নষ্ট করে পরিবেশগত তি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।
এছাড়া জলাধার সংরণ আইন-২০০০ বলা হয়েছে, কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। ওই আইনের ৫ ধারা মতে, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণিও পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু এসব আইনের কোনো তোয়াক্কাই করছেন না পুকুর ভরাটকারীরা। এতে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
সচেতনমহল মনে করেন, এভাবে পুকুর ভরাট করা সম্পূর্ণ বেআইনি। তারা বলেন, নিজের পুকুর হলেও কোনো ব্যক্তি তা ভরাট করতে পারবে না। তাই দ্রুত এ ভরাট বন্ধ করা উচিত এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তা না হলে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে।
কারণ হিসাবে তারা বলেন, আমাদের এই জলাধারগুলো অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতকে শোষণ করে এবং শুষ্ক মৌসুমের জন্য পানি সংরণ করে, যা জনসাধারণকে খরা বা অনাবৃষ্টির মতো বিপর্যয় থেকে রা করে। এছাড়াও এই জলাধারগুলো মাছের চাহিদা পূরণ এবং মৎস্যচাষীসহ বেকারদের আয়ের অন্যতম অবলম্বন। তাই, গ্রামাঞ্চলের এই জলাধারগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি দেখছি।