নিজস্ব প্রতিবেদক:
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার রায়পুর ইসলামাবাদ গ্রামের প্রধানিয়া বাড়ির মোঃ খলিল প্রধানিয়ার ছেলে মামুন প্রধানিয়ার সৌদিআরবে প্রতারণা মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়েছে।
জানা যায়, সৌদি প্রবাসী হাজীগঞ্জ উপজেলার ৪ নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের সাকছি পাড়া গ্রামের আমির হোসেনের সৌদি আরবের রিয়াদের ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতো মামুন।
আমির হোসেন ৩ মাসের ছুটিতে বাড়িতে আসার পর মামুন সৌদিআরবের রিয়াদে আরবিদের কাছ থেকে ১০ হাজার রিয়াল বাংলার ৩০০০০০ লক্ষ টাকার ফার্নিচারের কাঠ বাকিতে নিয়ে আসে।
এ বিষয়ে আমির হোসেনকে মামুন জানায়নি।
আর এই বাকি টাকা না দেওয়ায় এক আরবী তার বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা দেয়। এতে মামুনের ১০ বছরের সাজা হয়। বর্তমানে মামুন সৌদিআরবের রিয়াদে পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে।
মামুন সৌদিআরবের আব্দুল গনি নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভিসা নিয়ে সৌদিআরবের রিয়াদে রং এর কাজে চাকরি নেয় । সে সৌদিআরবে আসার পর তার এক বছরের কাগজপত্র বৈধ ছিল। পরে এক বছরের মাথায় মামুনের কাগজপত্র অবৈধ হয়ে যায় ।
তারপর হাজীগঞ্জ উপজেলার ৪ নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের সাকছি পাড়া গ্রামের প্রবাসী আমির হোসেনের মাধ্যমে মামুনের তার কাগজপত্র বৈধ ভাবে করে নেয়। তারপর মামুনকে আমির হোসেন তার ফার্নিচার দোকানে চাকরি দেয়।
মামুনকে আমির হোসেনের ফার্নিচারের দোকানের দায়িত্ব দিয়ে আমির হোসেন ৩ মাসের ছুটিতে বাংলাদেশে চলে আসে। আমির হোসেনের ফার্নিচারের দোকানে চাকরির সুবাদে মামুন আরবিদের কাছ থেকে বাকিতে ফার্নিচারের কাঠ নিয়ে আসে। বাকি টাকা না দেওয়ায় আরবিরা মামুনের বিরুদ্ধে প্রতারণ মামলা দেয় এতে মামুনের ১০ বছরের সাজা হয়।
হাজীগঞ্জ উপজেলার ৪ নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের সাকছি পাড়া গ্রামের প্রবাসী আমির হোসেন জানান, মামুন বিভিন্ন মাধ্যমে বলতেছে ২০২০ সালের ফেরুয়ারি মাসে আমি নাকি তাকে ভিসা দিয়েছি। কিন্তুু তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। মূলত তাকে ভিসা দিয়েছে সৌদিআরবের আব্দুল গনি। তারপর মামুন আমাকে বলছে তুমি আমার দেশের মানুষ এবং বন্ধুর মত, আমাকে কাগজপত্র করে দাও। আমি তাকে কাগজপত্র করে দিয়েছি। মামুন সৌদি আরবে আসার পর এক বছর কাগজ পত্র বৈধ ছিল তারপর অবৈধ হয়ে যায়।
শুনেছি মামুন কিছুদিন কাজ করার পর সে আরবির কাছ থেকে পালিয়ে আসে। পালিয়ে আসার সময় সে প্রায় ৪৫০০(চার হাজার পাঁচশত) রিয়াল বাংলায় ১,৩০,০০০ (এক লক্ষ ত্রিশ হাজার) টাকা নিয়ে আসে।
আমার কাছে আসার পর সৌদির ৫২০০ (পাঁচ হাজার দুইশত) রিয়াল বাংলায় ১.৫৫,০০০(এক লক্ষ পঞ্চান্ন হাজার) টাকা দিয়ে মামুনের কাগজপত্র বৈধ করে ভিসা লাগাইয়া দেই । তারপর তাকে আমি আমার দোকানে চাকরি দিয়েছি বিশ্বাস করে।
তার কাছে আরবির কিছু টাকা পাওনা ছিল সে টাকাও আমি পরিশোধ করে দিয়েছি। মামুন আমার দোকানে কাজ করার বিনিময়ে প্রতি মাসে তাকে ৩,২০০ রিয়াল করে বেতন দিতাম। তার বেতনের এক টাকাও আমার কাছে বাকি ছিল না। যে টাকা দিয়ে আমি কাগজপত্র করে দিয়েছি সে টাকাও বলছে প্রতি মাসে ১০০০ হাজার রিয়াল করে কেটে রাখার জন্য কিন্তু আমি তার কাছ থেকে কোন টাকা কেটে রাখি নাই ।
তার কিছু দিন পর আমি ৩ মাসের ছুটিতে বাড়িতে চলে আসি মামুনকে দোকানের দায়িত্ব দিয়ে।
আমি বাড়িতে আসার আগে আমার দোকানের সকল কর্মচারীর বেতনের সব বাকি টাকা পরিশোধ করে দিয়ে আসি। আমি বাড়ি আসার পর তিন মাসের মধ্যে মামুন এক টাকাও কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করে নাই । যখন আমি বাড়ি থেকে সৌদি আসি মামুনকে আমি বলেছি আমার সব টাকার হিসাব দিতে।
সে বলেছে দুইদিন পর হিসাব দিবে। এই কথা বলে সৌদির ১৩৫০০ রিয়াল, বাংলার ৩৮৫,০০০ ক্যাশ টাকা চুরি করে আমার সাথে প্রতারণা করে পালিয়ে যায় মামুন।
আমির হোসেন আরো জানান, সে প্রতারণা করে পালিয়ে যাওয়ার পর আমি বাড়ি থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়ে দোকানের কর্মচারীদের বাকি বেতনের সব টাকা পরিশোধ করে দেই। পালিয়ে যাওয়ার ২০-২৫ দিন পর আমরা ফার্নিচারের দোকান বন্ধ করে দেই। মামুন আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমার এত সুন্দর ব্যবসা নষ্ট করে দিয়েছে। এখন আমি অন্যের দোকানে চাকরি করি। সে আমার সাথে প্রতারণা করেছে।
মামুন আমার ফার্নিচারের দোকানে কাজ করা সুবাদে বিভিন্ন দোকান থেকে মাল তৈরি করা কথা বলে সে ফার্নিচারের কাঠ টাকা ছাড়াই বাকিতে আনে। ঐ ফার্নিচারের কাঠের টাকা না দেওয়ায় আরবি পাওনাদাররা সেই টাকার জন্য মামুনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। এই মামলায় মামুনের ১০ বছরের সাজা হয়। মামুন পুলিশের ভয়ে পালিয়ে অন্য জায়গায় এখন কাজ করছে বলে শুনেছি।
যদি সে বাকি টাকা পাওনাদারকে পরিশোধ করে দেয় তাহলে সে বাড়িতে আসতে পারবে বলে জেনেছি। আমি বা আমার প্রতিষ্ঠানের কারও বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই, শুধু মাত্র মামুন আরবিদের সাথে প্রতারণা করায় তার বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হয়। সে সৌদি আরবে আরো অনেক সাথে প্রতারণা করেছে। সে আমাদের নামে শুধু শুধুই মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, যার কোন ভিত্তি নাই বা তার কোন প্রমান নাই। আমি তার কাছে সব মিলিয়ে প্রায় সৌদির ২৩,২০০ রিয়াল পাই। বাংলায় প্রায় ৭,০০,০০০ লক্ষ টাকা।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলার রায়পুর ইসলামাবাদ গ্রামের প্রধানিয়া বাড়ির মোঃ খলিল প্রধানিয়ার ছেলে প্রবাসী মামুন প্রধানিয়ার মুঠোফোনে বলেন, গত নভেম্বর মাসে বাড়িতে আসার জন্য ছুটি নিয়েছিলাম। টিকিট কিনতে গিয়ে জানতে পারি আমার নামে মামলা হয়েছে।