আহসান হাবীব সুমন:
রুপালী ইলিশের জন্য বিখ্যাত চাঁদপুর জেলা । চাঁদপুর জেলার
কচুয়া সংসদীয় আসনটি উজানীর ক্বারী ইব্রাহীম (র) প্রতিষ্ঠিত
উজানী মাদ্রাসা। আরো রয়েছে বেহুলা লক্ষীন্দরের স্মৃতি বিজরিত
মনসামূড়া। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের
প্রচার প্রচারনায় চলছে চাঁদপুর -১ কচুয়া আসনটিতে আওয়মী লীগ
বিএনপি উভয় দলেই দলীয় আভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। এ কোন্দলের কারনে
বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুদলেই পাল্টাপাল্টি কমিটি ও দলীয়
কর্মসূচি পালন করছে। ফলে কোন্দলের এ ঢেউয়ের প্রভাব পড়েছে
তৃনমূলে। জয় নিশ্চিত করতে দলীয় কোন্দল মেটাতে হবে সভার আগে।
সম্ভাব্য মনোয়ন প্রত্যাশীরা ক্রমেই নির্বচিনী মাঠে সরব হয়ে
উঠছেন। ইতিমধ্যে সভা-সমাবেশ,কর্মী সভা,বিভিন্ন ত্রান সামগ্রী
বিতরণ,ভোটারদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়, সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে
মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গনসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারের মাধ্যেমে
নিজেদের প্রার্থীতার কথা জানান দিচ্ছেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর -১ কচুয়া আসনে
১২ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ভোটার ৩লক্ষ৫০হাজার
৫শত২৫,পুরুষ ১৮৪২৮৮ ,মহিলা ১৬৬২৩৭জন।একাদশ জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড.মহীউদ্দীন খান
আলমগীর ১,৯৭,৬৬৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় বারের মত এমপি নির্বাচিত
হয়। প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী বিএনপি মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন
ধানের শীষ প্রতীকে ৭৯০৪ ভোট পায়। মুলত বিএনপি’র ঘাঁটি বলে
খ্যাত এই আসনে ১৯৯১ আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মিসবাহ উদ্দীন
খান বিএনপির অধ্যক্ষ আবুল হাছানাতকে মাত্র ৫০০ ভোটোর ব্যবধানে
পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। ২০০১ ও ২০০৮ সালে
বিএনপি’র সে সময়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনম
এহাসানুল হক মিলন এমপি নির্বাচিত হয়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চারজন প্রার্থী
মাঠে রয়েছে। তার মধ্যে বর্তমান এমপি ড.মহীউদ্দীন খান
আলমগীর,কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক
ড.সেলিম মাহমুদ,একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যৌথ মনোনয়ন
প্রাপ্ত এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও সচিব মো: গোলাম হোসেন
এবং কচুয়া উপজেলা পরিষদের আওয়ামী লীগ মনোনীত দুবারের
নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত
সভাপতি শাহজাহান শিশির। ড.মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি প্রায়
প্রতি সপ্তাহে এলাকায় সফর করে সরকারে উন্নয়ন কর্মকান্ডে জড়িত
রয়েছেন। কচুয়ায় আওয়মী লীগ সরকারের আমলে ড.মহীউদ্দীন খান
আলমগীর এমপি’র নেতৃত্বে সমগ্র উপজেলায় ব্যপক উন্নয়ন সাধিত
হয়েছে। ড.সেলিম মাহমুদ এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের
পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করে আসছেন। তিনি
করোনাকালীন এলাকার মানুষের পাশে থেকে খাদ্য সামগ্রী প্রদানসহ
বিভিন্নভাবে সহযোগীতা দিয়েছেন। এনবিআরের সাবেক
চেয়ারম্যান মো: গোলাম হোসেন প্রায় ৬ বছর যাবত সরাসরি
রাজনৈতিক কর্মকান্ডের পাশাপশি সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে
সম্পৃক্ত হয়ে প্রতিটি এলাকার নেতা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে
আসছে। করেনাকালীন খাদ্য সামগ্রী ও অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে
অসহায় মানুষকে সহযোগীতা করেছেন। এদিকে করোনাযুদ্ধা উপজেলা
চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী
লীগের সকল শীর্ষস্থানীয় নেতারা তাঁর বিরোধীতা করার পরেও তৃনমূল
নেতাকর্মী ও সাধারন জনগনের সমর্থনে নৌকা প্রতীকে বিপুল
ভোটে বিজয়ী হয় ও সর্বশেষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে
তৃনমূলের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়। এছাড়া কচুয়া উপজেলা
একযুগে ৬৪ হাজার বৃক্ষ রোপনসহ বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক
বিভিন্ন প্রোগ্রাম শতভাগ অংশগ্রহন এবং তৃনমূল নেতাকর্মীদের
সাথে সু-সম্পর্ক থাকায় তৃনমূল নেতকর্মীরা ড.মহীউদ্দীন খান
আলমগীর এমপির পরে বিকল্প হিসেবে করোনা যুদ্ধা শাহজাহান শিশিরের
অবস্থান অনেকে জানান দিয়েছেন।
,
আওয়মী লীগ দলীয় নেতাকমীগন মনে করেন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে
আওয়ামী লীগের রাজনীতি ত্রি ধারায় বিভক্ত। দলীয় নেতা কর্মীরা মনে করেন
দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারনে ত্যাগী ও দু:সময়ের নেতা কর্মীদের
মুল্যায়ন না হওয়ায় দলের মধ্যে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া সংসদ
নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী থাকার কারনেও দলের রাজনৈতিক এ
বিভক্তি।
অন্যদিকে বিএনপি থেকে দুবার নির্বাচিত সাবেক সাংসদ ও
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহসানুল হক মিলন ২০০৮ সালের
নির্বাচনের পর বেশকিছু মামলার আসামী হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন।
বিএনপির নেরতাকর্মীরা মনে করেন বিএনপি কেন্দ্রী আন্তর্জাতিক
বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলনের বিকল্প নেই । তবে আনম এহসানুল
হক মিলন প্রতিবেদককে জানিয়েছেন এ আসন থেকে নির্বাচন
করবেন না অ তিনি তাঁর আদি নিবাস ঢাকা-১৫ অর্থাৎ মিরপুর
পীরেরবাগ থেকে দলের মনোনয়ন চাইবেন। কচুয়া আসন থেকে তাঁর স্ত্রী
কচুয়া গোহট উত্তর ইউনিয়নের পালগিরি গ্রামের মিয়াজী বাড়ির
বাসিন্দ ও জাতীয়তবিাদী মহিলা দলের সহ-সভানেত্রী নাজমুন নাহার
মনোনয়ন চাইবেন।
অপরদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আরো দুইজন
প্রার্থীর নাম শোনা যায়।২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন
করেছেন কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য ও মালয়েশিয়া বিএনপির সাধারন
সম্পাদক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন,উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-
সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মনিরুজ্জামান দেওয়ান মানিক। গত সংসদ
নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম তেমন একটা
চোখে পড়েনা।বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনের পর আনম এহসানুল হক
মিলনের অনুসারীগন নিজেদের দলীয় কোন্দলে কোনঠাষা হয়ে পড়ছে।
বিএনপিসহ সহযোগী প্রতিটি সংগঠনের ২টি করে কমিটি
রয়েছে। মালয়েশিয়া প্রবাসী বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন জেলা
কতৃক অনুমোদিত কমিটি। অপরদিকে আনম এহসানুল হক মিলনের
বিএনপিসহ প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের একটি করে কমিটি
ঘোষনা করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বিএনপির রাজনীতি
স্পষ্টতই দুটি গ্রæপে বিভক্ত। তবে গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে
মোশাররফ হোসেনের সমর্থিত নেতাকমীরা এলাকায় থাকলেও মোহাম্মদ
মোশাররফ এলাকায় নেই।অপর নেতা ইঞ্জিনিয়ার মনিরুজ্জামান দেওয়ান
মানিক প্রায়ই এলাকায় এসে দলীয় নেতাকর্মীদের সহযোগীতার
পাশাপশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। সব
মিলিয়ে আওয়মী লীগ বিএনপি দুটি দলেই আভ্যন্তরীণ কোন্দল বিদ্যমান।
জাতীয় পার্র্টির প্রার্থী সাবেক এমপি ও চাঁদপুর জেলা জেলা পরিষদের
সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা.একেএম শহীদুল ইসলাম এবং কেন্দ্রিয়
যুব নেতা ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব এডভোকেট মাইন
উদ্দিন মাইনু। জাতীয় পার্টির সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে
বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকান্ড করে আসছেন। বড় দটি দলের অভ্যন্তরীন
দ্বন্দ কাজে লাগাতে চায় জাতীয় পার্টি।