তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি খেলার মাঠ। আর মাঠেই প্রতিবছর বর্ষায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে বন্ধ থাকে প্রাত্যহিক সমাবেশসহ কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের খেলাধূলা। প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধ সেই পানি দিয়ে হাঁটা-চলা করার কারণে দেখা দেয় এলার্জিসহ বিভিন্ন চর্মরোগ। এছাড়া জমে থাকায় সেই পানি যখন নোংরা পানিতে পরিণত হয়, তখন মশা ও পোকা-মাকড় জন্মে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে বসাটা দুরুহ হয়ে পড়ে।
তাছাড়া জলাবদ্ধ পানির কারণে স্থানীয় ও এলাকার শিশু-কিশোরদেরও বৈকালিন সময়ের আড্ডা ও খেলাধূলাও বন্ধ থাকে। বলছি, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৮নং ওয়ার্ড টোরাগড় গ্রামের স্বর্ণকলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্বর্ণকলি কেজি স্কুল ও স্বর্ণকলি হাই স্কুলের কথা। স্বর্ণকলি কেজি স্কুলটি ১৯৮৪ সালে, প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে এবং হাই স্কুলটি ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
সরজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত খেলাধুলা, প্রাত্যহিক সমাবেশ ও শারিরিক কসরতসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিযোগিতা (খেলাধূলা), সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তাছাড়া স্থানীয় ও এলাকার শিশু-কিশোরেরা প্রতিদিন খেলাধূলা করে। কিন্তু বর্ষাকাল এলেই প্রায় ২ মাস খেলাধূলা থেকে বঞ্চিত হয় তারা। এ মাঠটিসহ আশপাশের বাড়ি উঠান ও রাস্তায় হাঁটু পানি জমে থাকে।
বিশেষ করে টানা তিন চার দিন বৃষ্টি হলেই এমন অবস্থা দেখা যায়। বিদ্যালয় তিনটির ক্যাম্পাস কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে প্রায় ১ ফুট এবং মাঠটি প্রায় তিন ফুট নিচু অবস্থানে। বিদ্যালয়ের আশ-পাশের পুকুরসহ বিভিন্ন নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণেই বর্ষায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। এছাড়াও হামিদিয়া জুট মিলসের পিছনের দিঘী (বড় পুকুর) ভরাট হয়ে যাওয়ায় গত দুই-তিন বছর ধরে বর্ষা এলেই এমন ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
স্থানীয় একজন অভিভাবক ও ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, আশপাশের বাড়িগুলো থেকে বিদ্যালয়ের মাঠ নিচু। এলাকার পুকুর ও নালাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া পানি নিস্কাশন হচ্ছেনা। ফলে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলেই মাঠটিতে পানি জমে যায়। তিনি বলেন, প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবরের কিছু সময় পর্যন্ত মাঠটি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। তাই মাঠ ভরাটসহ পানি নিস্কাশনের জন্য প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।
বিদ্যালয়ের পিটিআই কমিটির সাবেক সভাপতি জহির আহমেদ জহির জানান, মানবসৃষ্টের কারণেই এই জলাবদ্ধতা। পুকুর, ডোবা ভরাট করে বসতবাড়ি স্থাপন হওয়ায় বৃষ্টির পানি নামার পথ নেই। যার ফলে স্কুল মাঠসহ আশপাশের বাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে মাঠ ভরাটসহ বর্ষার পানি নিস্কাসনে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসন ও পৌর প্রশাসকের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনিসহ এলাকার লোকজন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল জানান, গত তিন/চার বছর ধরে জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মাটি দিয়ে ভরাট করা ছাড়া মাঠের এই জলাবদ্ধতা দূর করা যাবে না। তাছাড়া বিদ্যালয়ের আশ-পাশের বাড়ির পানি নিস্কাশনের জন্য ড্রেনের প্রয়োজন। কারণ, ড্রেন না থাকায় এলাকার পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই, প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, মাঠটি অনেকটা নিচু। তাই প্রতি বছর বর্ষা এলেই মাঠটিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য মাঠ ভরাটের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা অবহিত করেছি। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে আমরা আবারো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো এবং পানি নিস্কাশনে প্রশাসন ও পৌর প্রশাসক মহোদয়ের প্রতি অনুরোধ রাখবো।
এ বিষয়ে পৌর ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হাজী মো. কবির হোসেন কাজী বলেন, গত দুই/তিন বছর বর্ষা এলেই বিদ্যালয় মাঠটিসহ আশ-পাশে বাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আমি দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে প্রথম প্রথম নিস্কাশন করতে পেরেছি। কিন্তু এখন আশ-পাশের পুকুর, ডোবা ও পানি নিস্কাশনের পথ ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। যা কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক পর্যন্ত ডুবে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল বলেন, বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মাঠ ভরাটের একটি আবেদন পেয়েছি। মাঠ ভরাট ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।