চাঁদপুরের মতলব উত্তরে জনপ্রিয় একটি খাবার ‘আজিজের পুরি’। কলাকান্দা ইউনিয়নের হানিরপাড় মোড়ে ক্যানেলের পাড়ে ছোট দোকানটিই আব্দুল আজিজের পুরির দোকান। ওই দোকানে একটাই খাবার মেলে, সেটা হলো আলুপুরি।
আজিজের পুরি কিনতে বেশ খানিকটা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয়। ছোট ছোট পুরি পেতে বা খেতে বিকেলের পর থেকেই ছোট দোকানটির সামনে জটলা তৈরি হয়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে কিনতে হয় খাবারটি। জনপ্রিয় এই আলুপুরির বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি আকারে ছোট, বিশেষ মসলাযুক্ত আর কুড়মুড়ে। সাথে আছে পিঁয়াজ ও শুকনো মরিচের সুস্বাদু সালাত। দাম একেকটা তিন টাকা। প্রতিদিন গড়ে এখানে দুই থেকে আড়াই হাজার পুরি বিক্রি হয়।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মচারী মো. জামসেদ পাটোয়ারী এ এলাকায় কাজে এসেছিলেন। বিকেলে কাজ শেষে যাওয়ার পথে দেখে আজিজের পুরির দোকানটায় অনেক লোকের সমাগম। পরে ক্যানেলের ঐ পার গিয়ে দেখে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে অনেক লোক। জামসেদ পাটোয়ারী জানান, আমার ও খিদে ছিল তাই পুরি খাওয়ার জন্য সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর পেলাম সেই কাঙ্খিত আজিজের পুরি। মুখে দিতেই সুস্বাদু। সেই থেকে আমি প্রতিনিয়ত এ এলাকায় আসলে আজিজের পুরি খেয়ে যাই ও ফ্যামিলিদের জন্য বাসায় নিয়ে যাই।
ছেংগারচর পৌরসভার দেওয়ানজীকান্দি গ্রামের মো. সুমন পাহাড় জানান, আমি সহ আমার এলাকার বন্ধুবান্ধব নিয়ে প্রায়ই আজিজের পুরি খেতে আসি। লাইনে অপেক্ষারত অবস্থায় তিনি বলেন, এই পুরি এখন মতলব উত্তরের ঐতিহ্য হয়ে যাওয়ার পথে। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। দিয়ে তো পারে না। কেউ ৩০টা, কেউ ৫০টা, কেউ ১০০টা পর্যন্ত অর্ডার করছে।
বন্ধুদের নিয়ে পুরি খেতে আসা মে. রায়হান জানান, পুরির দাম কম হলেও বেশ মজাদার। এই এলাকায় সবার কাছে পরিচিত এই আজিজ পুরি।
আরেক ক্রেতা সফিকুল ইসলাম বলেন, অনেকদিন ধরেই শুনছি হানিরপাড়ে পুরি খেতে অনেক মানুষ আসে। আজ ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে আসলাম স্বাদ নিতে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে ৩ টাকায় পুরি পাওয়া অনেক ভালো বিষয়।
আকারে ছোট হলেও পুরিটা বেশ স্বাদের। পুরির সঙ্গে ছিটানো বিট লবণ, পেঁয়াজকুচি ও ধনেপাতা থাকে, যা স্বাদ আরও বাড়িয়ে দেয়।
আজিজের পুরির খ্যাতি পুরো উপজেলা জুড়ে। যার নামে দোকান সেই আব্দুল আজিজ মিয়া দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছেন তার এই প্রতিষ্ঠানটি। এখন তার সাথে সহযোগিতা করেন তার দুই ছেলে।
সম্প্রতি এক রাতে ওই দোকানে গিয়ে দেখা গেল, দোকানের সামনে বেশ বড় লাইন। দোকানের পাঁচজন ভীষণ ব্যস্ত ক্রেতাদের সামলাতে। ছোট দোকানের মধ্যে দুজন মেশিনের মতো হাত চালিয়ে পুরি বেলছেন। সামনের উনুনে গরম তেলে সেই পুরি ফেলছেন আরও দুজন। দোকানের পাশের আরেকটা বেঞ্চে আরও একজন পুরি তৈরির কাজ করছেন। দোকান মালিক আব্দুল আজিজ সবকিছু তদারকি করছেন। মাঝেমধ্যে নিজেই পুরি তৈরি করছেন, আবার কখনো গ্রাহকের হাতে ভাজা পুরি তুলে দিচ্ছেন।
আব্দুল আজিজের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ২৫ বছর আগে এই জায়গাতে পুরি বিক্রি শুরু করি। এখনো এই পেশায়ই আছি। আমার চারজন ছেলে সন্তান রয়েছে। বর্তমানে এক ছেলে বিদেশে আছে, আরেক ছেলে পাশেই ফার্নিচারের দোকান আছে, আর দুই ছেলে আমার পুরির দোকান পরিচালনা করে আসছে। আমি এই ব্যবসা করে এখন বেশ ভালই আছি।
তিনি আরও বলেন, আমি সবদিক দিয়ে খুশি। ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘরসংসার আর মানুষের কাছ থেকে পাওয়া ইজ্জত, সব মিলিয়ে ভালো আছি। এখানে এমন এমন লোক আসেন, যা আমি কল্পনাও করতে পারি না। আমি মতলবের বাইরে অনেক জায়গা যাই, হয়তো আমি ওই লোককে চিনি না, কিন্তু লোকটা আমাকে চেনেন। অনেক সমাদর করেন। যখন বলেন, মতলবে আপনার একটা ছোট দোকান আছে না? আমরা তো বেড়াতে গিয়ে সিরিয়াল দিয়ে পুরি খাইছি, তখন মনটা ভরে যায়।
আজিজের আলুপুরিতে উপাদান হিসেবে আলু, ছোলার ডাল, রসুন, পেঁয়াজ, আদা, মসলাসহ কয়েক ধরনের মসলা ব্যবহার করা হয়। মসলাই অন্য পুরি থেকে আজিজের পুরিকে আলাদা করে।