বিগত সাত বছরের মধ্যে পাঁচবার অর্থদন্ড করা হলেও এখনো চলছে মতলব দক্ষিণ উপজেলার অবৈধ চার ইটভাটা! এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এমনই তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত) ২০১৯ এর ক্ষমতাবলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধ ভাবে পরিচালিত ইটভাটার মালিকগণকে অর্থদন্ড করলেও আজও বন্ধ হয়নি তাদের কার্যক্রম।
তথ্য সূত্রে দেখা যায়, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অবৈধভাবে পরিচালিত উপজেলার চার ইটভাটার বিরুদ্ধে পাঁচবার অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের সময় ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইনের ধারা ৪, ৫ এর ১, ২ এবং ৮ এর ১ অনুসারে ওই চার ইটভাটার কাছ থেকে ১২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটার বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করে জরিমানা আদায়ের মধ্য দিয়ে প্রশাসন তাঁদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখায় সাধারণ জনগণের মাঝে নানান প্রশ্নে জন্ম দিয়েছে।
প্রকাশিত সংবাদের থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর উপজেলার চার ইটভাটার মধ্যে মেসার্স স্ট্যান্ডর্ড ব্রিক্স, মেসার্স শাহ পরান ব্রিক্স, মেসার্স সিএসবি এবং মেসার্স কেএসবি এর প্রত্যেককে ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত) ২০১৯ এর ধারা ৪ ও ৮(১) লংঘনের দায়ে ১৫ হাজার টাকা করে মোট ৬০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়। এই অভিযান পরিচালনা করেন মতলব দক্ষিণ উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদুল ইসলাম, সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুশরাত শারমিন এবং চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এএইচএম রাসেদ।
২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি মতলব দক্ষিণ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেটু কুমার বড়ুয়া ওই ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। এই সময় মেসার্স শাহ পরান ব্রিক্সকে ৭০ হাজার টাকা, মেসার্স সিএসবি ৫০ হাজার টাকা এবং মেসার্স কেএসবিকে ৪০ হাজার টাকা অর্থ দন্ড করা হলেও রহস্যজনক কারণে মেসার্স স্ট্যান্ডর্ড ব্রিক্সের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি। ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মতলব দক্ষিণ উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাস ও চাঁদপুর জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ হান্নান ওই চার ইটভাটার প্রত্যেক মালিকপক্ষকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট দুই লাখ টাকা অর্থদন্ড করেন।
পরবর্তীতে মতলব দক্ষিণ উপজেলার সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতিমা সুলতানা চার ইটভাটার প্রত্যেক মালিকপক্ষকে ৬০ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ ৪০ টাকা অর্থদন্ড করেন এবং সর্বশেষ চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়। এতে মসার্স স্ট্যান্ডর্ড ব্রিক্স, মেসার্স শাহ পরান ব্রিক্স ও মেসার্স সিএসবিকে দুই লাখ টাকা করে মোট ছয় লাখ টাকা অর্থ দন্ড প্রদান করা হয়। তবে চলতি বছর অপর ইটভাটা মেসার্স কেএসবি এর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অভিযানে জেলা প্রশাসকের সহকারী কমিশনার ভূমি ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকারিয়া হোসেন, জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ হান্নান, পরিচালক শারমিন আহমেদ লিয়াসহ বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, পুলিশ ফোর্স এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে পরিচালিত অভিযানে বিপুল সংখ্যক প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত থাকলেও স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়নি ইটভাটাগুলো। এখনো চলছে তাদের কার্যক্রম, এতে অবৈধ ভাবে পরিচালিত ইটভাটার বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।