অনলাইন ডেস্কঃ
সারা দেশে গড়ে প্রতিদিন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন পাঁচজনেরও বেশি। আগের বছরের তুলনায় গত বছর আত্মহত্যার চেষ্টা বেড়েছে ৬২ শতাংশ। আত্মহত্যাপ্রবণতায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। এরপর সবচেয়ে বেশি কুমিল্লায়। তবে মেহেরপুরে আত্মহত্যাপ্রবণতা সবচেয়ে কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্থসামাজিক সমস্যা, পারিবারিক সংকটের পাশাপাশি মানসিক চাপ, হতাশা ও নানা ধরনের হেনস্তা থেকে মুক্তি পেতে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যাপ্রবণতা বাড়ছে বছরের শেষ ছয় মাসে আত্মহত্যাপ্রবণতা থাকে সবচেয়ে বেশি।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছরে সারা দেশে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ৩ হাজার ৯১৮ জন এর মধ্যে ২০২০ সালে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ১ হাজার ৪৯৮ জন। আর গত বছর আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ২ হাজার ৪২০ জন। অর্থাৎ ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর আত্মহত্যার চেষ্টা বেড়েছে ৬২ শতাংশ। আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের মধ্যে ২ হাজার ২৪৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৬৭৫ জনের। আত্মহত্যাপ্রবণ জেলাগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। এ জেলায় গত দুই বছরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ২৩২ জন। এর মধ্যে ১১২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও মৃত্যু হয় ১২০ জনের। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কুমিল্লা। এ জেলায় গত দুই বছরে আত্মহত্যা চেষ্টা করেন ১৬৬ জন। জীবিত উদ্ধার ৮০ জন। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা। সেখানে গত দুই বছরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ১৫৮ জন। এর মধ্যে বেঁচে গিয়েছেন ৬৫ জন। আত্মহত্যাপ্রবণতায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে গাজীপুর জেলা। সেখানে গত দুই বছরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ১৩৭ জন। জীবিত উদ্ধার হয়েছেন ৭৬ জন। পঞ্চম অবস্থানে থাকা ময়মনসিংহ জেলায় গত দুই বছরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ১১৮ জন। জীবিত উদ্ধার ৬২ জন। এছাড়া গত দুই বছরে আত্মহত্যাপ্রবণতায় এগিয়ে থাকা জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী ও বগুড়া।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে কম আত্মহত্যার চেষ্টা হয়েছে মেহেরপুর জেলায়।সেখানে গত দুই বছরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন তিনজন। দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও মৃত্যু হয় একজনের। যদিও মেহেরপুরের পার্শ্ববর্তী জেলা কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ রয়েছে আত্মহত্যাপ্রবণতায় এগিয়ে থাকা জেলার তালিকায়। কম আত্মহত্যাপ্রবণ জেলাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাঙ্গামাটি। এ জেলায় গত দুই বছরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন চারজন। একজন মারা গেলেও বেঁচে গিয়েছেন তিনজন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা বান্দরবান জেলায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন চারজন। এর মধ্যে তিনজনই জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। চতুর্থ অবস্থানে থাকা খাগড়াছড়ি জেলায় আত্মহত্যা চেষ্টা করেন পাঁচজন। তবে শেষ পর্যন্ত মারা যাননি কেউ। আর কম আত্মহত্যাপ্রবণতায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা। সেখানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ছয়জন। জীবিত উদ্ধার পাঁচজন। এছাড়া কম আত্মহত্যাপ্রবণ জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে নড়াইল, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট।দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যেও আত্মহত্যাপ্রবণতার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন। গত দুই বছরে এখানে আত্মহত্যা চেষ্টা করেন ১ হাজার ৩৯ জন। বেঁচে গিয়েছেন ৬১৪ জন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ২৩৮ জন। এর মধ্যে ১৫০ জনকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন (আরএমপি) এলাকায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ৫৬ জন। এর মধ্যে জীবিত উদ্ধার হয়েছেন ৩৮ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাসান এ শাফী এ বিষয়ে বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও গাজীপুর—সব জেলাই ঢাকার কাছাকাছি। চারটি জেলার অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো মানুষ অনেক বেশি বিচ্ছিন্ন। তাদের পারিবারিক বা সামাজিক বন্ধন গ্রামীণ এলাকার চেয়ে তুলনামূলক দুর্বল। গ্রামীণ এলাকায় সামাজিক বন্ধন অনেক দৃঢ় হয়। এসব এলাকায় নগরায়ণের মাত্রা বেশি। লোকজনের কর্মচাঞ্চল্য বেশি। এজন্য এসব এলাকায় আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চেষ্টা বেশি ঘটে।