দেশের অনেক ভাটি অঞ্চল যখন পুড়ছে তীব্র দাবদাহে, তখন সিলেট ভাসছে জলে। সেখানে বিরাজ করছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি।
এর আগে গত এপ্রিলে বন্যায় তলিয়ে যায় সিলেটসহ আশপাশের হাওর এলাকার ফসল। এর মাসখানেক না যেতেই সিলেটে আবারও দেখা দিয়েছে বন্যা।
এবার বন্যা এসেছে আরও ভয়ঙ্কর রূপে। তলিয়ে গেছে প্রায় পুরো সিলেট। সুনামগঞ্জেরও বেশিরভাগ এলাকা জলমগ্ন।
বারবার কেন সিলেটে বন্যা হচ্ছে? বন্যা কেন এত তীব্র আকার ধারণ করছে?
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটে প্রধান নদীগুলো বিশেষত সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া, নগর ও এর আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জলাশয় ভরাট, দখল হওয়া এবং সিলেটের উজানে মেঘালয়ে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণেই এই বন্যা।
এছাড়াও আগে প্রত্যেক বাড়ির সামনে পুকুর ছিল। আর সিলেটকে বলা হতো দিঘির শহর। এখন আমরা নগরের ভেতরের সব পুকুর-দিঘি ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং করেছি। হাওরগুলো ভরাট করে ফেলেছি। এ ছাড়া প্রধান নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। খালি মাঠগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে পানি নামতে পারতেছে না। যেকোনো দুর্যোগেই সিলেটের জন্য এটা একটা ভয়ের কারণ।’
নদীর তলদেশ ভরাট
সিলেটের প্রধানতম নদী সুরমার দুই রূপ। বর্ষায় দুকোল উপচে ডুবিয়ে দেয় জনবসতি। আর গ্রীষ্মে পানি শুকিয়ে পরিণত হয় মরা গাঙে। জেগে উঠে চড়।
প্রায় ২৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘের সুরমা দেশের দীর্ঘতম নদী। ভারতের বরাক নদী থেকে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। এই নদী বছরের বেশিরভাগ সময় থাকে পানিহীন, মৃতপ্রায়।
পলি জমে ভরাট হয়ে পড়েছে নদীর তলদেশ। ফলে শুষ্ক মৌসুমে সুরমা হয়ে পড়ে বালুভূমি। অপরদিকে অল্প বৃষ্টিতেই নদী উপচে নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় বন্যা। বৃষ্টিতে নদীর পানি উপচে তলিয়ে যায় হাওরের ফসল।
ভরাট হয়ে পড়েছে এ নদীর উৎসমুখও। নদীর উৎসমুখের ৩২ কিলোমিটারে জেগেছে ৩৫টি চর। দুই দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যৌথ নদী কমিশনে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আটকে আছে উৎসমুখ খনন।
সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির মৌসুমে নদী উপচে পড়ে পানি। ভরাট হয়ে গেছে সিলেটের অপর প্রধানতম নদী কুশিয়ারাও। এই দুই নদী খনন ছাড়া বন্যা থেকে উত্তোরণ সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।