কচুয়া,(চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ থাকায় ২বছর পর উদযাপিত হয়নি‘সাচার রথযাত্রা’ উৎসবটি । কোভিড পরিস্থিতি কাটিয়ে দীর্ঘ দুবছর পরে সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ভারতীয় উ-মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ১৫৪ তম রথযাত্রা উৎসবে শামিল হবেন কচুয়ার তথা দেশ বিদেশের হাজার হাজার হিন্দু স¤প্রদায়ের ভক্তবৃন্দ।
শুক্রবার এ রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষ্যে সাচার জগন্নাথ ধাম মন্দির কমিটি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহন করেছেন ভোর সাড়ে ৪টায় মঙ্গলআরতি, ৭টায় গুরুপূজা, সকাল ৮টায় চৈতন্যচরিতামৃত পাঠ, সকাল ৯টায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, দুপুর ১২টায় ভোগা আরতি, দুপুর ২টায় ভজন কীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ, বিকাল ৪টায় জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গন থেকে রথ টেনে পশ্চিম বাজারে আনা হবে। সন্ধ্যায় ৭টায় আরতি কীর্তন অনুষ্ঠিত হবে। ৮ জুলাই উল্টো রথটানার মাধ্যমে শেষ হবে সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ভারতীয় উ-মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ১৫৪ তম রথযাত্রা ।
সনাতন ধর্মালম্বীদের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব পরিদর্শন ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন,কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির। এসময় জগন্নাধ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোতাছেম বিল্লাহ,সহকারী কমিশনার ভুমি ইবনে জায়েদ,কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন,ওসি তদন্ত ছানোয়ার হোসেন,কচুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মানিক ভৌমিক,হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক প্রিয়তুষ পোদ্দার প্রমূখ।
জগন্নাধ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু ও সিনিয়র সহ-সভাপতি নিখিল দাস জানান, গত দুই বছর করোনা মহামারির কারনে আমরা কোন রকম নিয়ম রক্ষার্থে স্নান যাত্রা ও রথ যাত্রা উৎসব পালন করেছি। আশা করছি স্বমহিমায় ফিরে জাকজমকপূর্ণ ভাবে রথযাত্রা উৎসব পালন করবো। আমরা স্থানীয় এমপি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও দেশ বিদেশের জগন্নাথ দেবের ভক্তবৃন্দের সহযোগীতায় জগন্নাথ দেবের পুনঃনির্মিত ভবন নতুন রূপে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আমরা আশা করছি এবারের রথযাত্রায় লক্ষাধিক ভক্তদের সমাগম ঘটবে।
রথ উদযাপন কমিটির সভাপতি বাসুদেব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক অরুন গোপ ও সুবল দাস জানান, জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেনের হাত ধরেই আমরা এই জগন্নাথ ধামের রথ যাত্রা উৎসব পালন করে আসছি। গত দুই বছর করোনার কারনে নিয়ম রক্ষায় রথ যাত্রা উৎসব পালনের পর এ বছর ফের পূর্ণ উদ্যমে হতে চলছে সাচার জগন্নাথ ধামের সাংস্কৃতিক সংঘের আয়োজন ১৫৪ বছরের প্রাচীন রথযাত্রা উৎসব।
কথিত আছে যে, প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে সাচার বাবু বাড়ির জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেন ভারতে হিন্দু তীর্থস্থান পুরীতে জগন্নাথ দর্শনে গেলে, জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দকে দর্শন দেননি। বরং পুরীর দরজা-জানালাগুলো আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। দর্শন লাভে ব্যর্থ হয়ে পরম ধার্মিক গঙ্গা গোবিন্দ সেন দর্শন লাভের আশায় পুরীর বাহিরে আমরন-অনশন শুরু করে দেয়। অনশনের কয়েকদিন অতিবাহিত হলে গঙ্গা গোবিন্দ সেন স্বপ্নাদৃষ্ট হন যে, এ স্থানে জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দ সেনকে দর্শন না দিয়ে তার সাচারের বাড়ির সম্মুখের দীঘিতে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে দর্শন দিবেন। স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে গঙ্গা গোবিন্দ সেন নিজ বাড়ি ফিরে আসেন এবং ক’দিন পর উক্ত দীঘিতে স্নান করার সময় আকস্মিক ভাবে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে জগন্নাথ দর্শন লাভ করেন।