১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পর থেকে এমন চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়তে হয়নি দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাকে। দেশজুড়ে হাহাকার চলছে। অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে দেশটির মানুষ। জিনিসপত্রের দামও আকাশ ছুঁইছুঁই। দেশের রিজার্ভে অর্থ নেই বললেই চলে। সব মিলিয়ে সরকার ও সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। এ অবস্থায় দেশটি থেকে পালাতে শুরু করেছে লোকজন। শ্রীলঙ্কার তামিলরা এখন ভারতে আসার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যেই শ্রীলঙ্কার ১৬ জন ভারতে ঢুকেছেন। তারা শরণার্থী হিসেবে ভারতে ঢুকছেন।
দেশটি থেকে ভারতে যাওয়া শরণার্থীরা জানিয়েছেন, সেখানে চাল প্রতি কেজিতে শ্রীলঙ্কার মুদ্রায় ৫০০রুপি অবধি পৌঁছেছে। ৪০০ গ্রাম পাউডার দুধের দাম ৭৯০ রুপি। এক কেজি চিনির দাম ২৯০ রুপি। ১৯৮৯ সালে গৃহযুদ্ধের সময় যেভাবে মানুষ পালাতো এবারেও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কান শরণার্থীদের দু’টি দল ভারতের তীরে এসে পৌঁছেছে। ছয়জনের একটি দল রামেশ্বর এলাকায় আসছিল সে সময় ভারতীয় কোস্ট গার্ড বাহিনী তাদের বাঁচায়। নৌকাটি ফোর্থ আইল্যান্ডে ফেঁসে গিয়েছিল। শরণার্থীরা শ্রীলঙ্কার উত্তর জাফনা এলাকা থেকে আসছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর অনুযায়ী, তামিলনাড়ু পুলিশ জানিয়েছে শ্রীলঙ্কায় গভীর সংকট তৈরি হয়েছে। তাই দেশটির শরণার্থীরা ভারতে ঢুকছে। শ্রীলঙ্কার উত্তরদিকে তামিল প্রভাবিত এলাকা রয়েছে। তামিলনাড়ু ইন্টেলিজেন্সের সূত্র মতে এটা শুধুমাত্র সূচনা। এখনও ওখান থেকে অনেক মানুষ আসবেন। ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী, খুব তাড়াতাড়ি আরও ২০০০ শ্রীলঙ্কান শরণার্থী ভারতে ঢুকবেন।
বেশ কিছুদিন ধরেই এমন করুণ অবস্থা চলছে শ্রীলঙ্কায়। মহামারি করোনার কারণে যে আর্থিক ধাক্কা লেগেছিল, তা সামলে উঠতে পারেনি অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। ফলে বিশ্বজুড়ে যখন করোনা থেকে উঠে আসার চেষ্টা চলছে, তখন চরম আর্থিক সংকটে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
দেশজুড়ে সবকিছুতে কেবল হাহাকার। টান পড়ে গেছে জ্বালানি তেল, খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব সামগ্রীর। পাওয়া যাচ্ছে না রান্নার গ্যাস ও কেরোসিন। বিদ্যুতের অভাবে শুরু হয়ে গেছে ব্ল্যাক আউট। পরিস্থিতি বিবেচনায় পেট্রল পাম্পে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, দেশটিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো প্রয়োজনীয় কাগজের সংকট দেখা দিয়েছে। কাগজের অভাবে লাখ লাখ স্কুলের পরীক্ষা পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণেই দেশটিতে এই চরম আর্থিক সঙ্কট দেখা গেছে। ডলারের তুলনায় শ্রীলঙ্কার টাকার দামও তলানিতে। করোনার দীর্ঘ মেয়াদি আর্থিক সংকটের পাশাপাশি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবও পড়ছে কিছু কিছু।
দেশের এই আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে গত বুধবার সর্বদলীয় বৈঠক করেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসে। বৈঠকের পর জানানো হয়, ইতোমধ্যে আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্রের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি। কিন্তু সেসব জায়গা থেকেও যথাযথ আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে না।