ফাহাদ খান :
ফরিদগঞ্জে ডাকাতিয়া নদীর বিশাল অংশজুড়ে নদীর দুই পাড়ে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় সংকুচিত হয়ে আসা নদীতে কচুরিপানা জমে পানির প্রবাহমানতায় ব্যাঘাত ঘটছে। নদীজুড়ে কচুরিপানার ফলে নদীর পানি আর দেখা যায় না। দূর থেকে দেখে মনে হবে সাজানো সব্জিবাগান।
সরজমিনে লক্ষ্য করা যায়, ফরিদগঞ্জ সদরের নদীর অংশের দুই পাড়েই যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। এতে হুমকিতে পড়েছে মৎস্য প্রজাতিসহ জীববৈচিত্র্য। নদীর পাড়ে ময়লার স্তূপ জমে সংকুচিত হয়ে আসছে নদীর প্রস্থ। এতে যেমন করে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বাড়ছে রোগবালাই; এবং দখল হচ্ছে নদীর বুক। নদীখেকোদের কল্যাণে একসময়ের জলের যৌবনে টগবগ করা নদী এখন মৃতপ্রায়। কচুরিপানা জমে থাকার এমন চিত্র সারা ফরিদগঞ্জেই।
বিশিষ্টজনেরা অভিমত দিচ্ছেন, সিআইপি বাঁধের কারণে নাব্যতা হারিয়ে খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদী এখন মরতে বসেছে। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকায় দেদারসে বাঁধ নির্মাণ করে সেচপানির প্রবহমানতা আটকে দেওয়া হচ্ছে। একসময় এই নদী অতিক্রম করে চলাচল করতো বিশাল মালবাহী জাহাজ, ট্রলার। এখন সেগুলো স্বপ্নাতীত।
স্থানীয়রা জানান, কচুরিপানার জন্য দেশীয় জাতের মাছও বিলীন হচ্ছে। নদীতে জেলেরা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। বর্তমানে সেটির হার কমতে কমতে ঠেকেছে শূন্যের দ্বারপ্রান্তে। হাতেগোনা ২/১টি জেলে পরিবার নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরছে। তারা বলছে, মাছের সংখ্যা নগণ্য। কচুরিপানা অপসারণে কোনো উদ্যোগ না নিলে নদী শুকিয়ে মরে যাবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ ডাকবাংলোর নিকট ১৯৮৯ সালে তৎকালীন এমপির নির্দেশে মাছচাষের উদ্দেশ্যে নদীতে মাটি ফেলে বাঁধ দেয়া হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পর সে প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে ‘বদ্ধ জলাশয়’ উল্লেখ করে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে লিজ নিয়ে সেতুর নিচে বাঁধ দিয়ে মাছচাষ শুরু করা হয়। এতে উপজেলার পূর্বাঞ্চলে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ জীব-বৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ হয়ে পড়ে। এর ফলে কমরেড আলমগীর হোসেন দুলালের নেতৃত্বে ‘ফরিদগঞ্জ মৎস্যজীবী সংগ্রাম পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন আন্দোলনে নামে। তারা উপজেলা, জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। তৎকালীন নির্বাহী অফিসার আবদুন নূরের নির্দেশে অভিযোগের তদন্ত করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনির চৌধুরী। তদন্তে ও রেকর্ডপত্রে জলাশয় ‘উন্মুক্ত’ হিসেবে প্রমাণ মেলে। এতে লিজ বাতিলের সুপারিশসহ রিপোর্ট পেশ করা হয়। রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার সরেজমিন তদন্ত করেন। তিনি ওই জলাশয়ের লিজ বাতিলের সুপারিশ করলে লিজ বাতিল করা হয়। এবার ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার পূর্বাঞ্চলে সেচ পানির অভাবে মাঠ ফেটে চৌচির হয়। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকের মাঝে হাহাকার ওঠে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কিছু মানুষ ডাকাতিয়ার দুই পাড়ের কিছু অংশ একটু একটু ভরাট করে দখল করেছে নদীখেকোরা। ময়লা-আবর্জনা ফেলে নষ্ট করছে দুই পাড়ের পরিবেশ। ফরিদগঞ্জ সদরের অংশের মতো করে ডাকাতিয়া নদী কচুরিপানায় ভরে গেছে বিভিন্ন অংশে। পরিস্থিতি এমন যে, মানুষ হেঁটে যেতে পারবে স্বাভাবিক গতিতে। কচুরিপানা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দূষণে কালো কুচকুচে পানি পরিণত হয়েছে মশার প্রজননক্ষেত্র। গোসল কিংবা গৃহস্থালির কাজে দুই পাড়ের বাসিন্দারা পানি ব্যবহার করেন না খুব একটা।
ইউএনও তাসলিমুন নেছা বলেছেন, নদীর দুই পাড়ের বর্জ্য আমার নজরে পড়েছে। নদীতে এসব ফেলতে নিষেধ করেছিলাম। শুনছে না। বাধ্য হয়ে মোবাইল কোর্টও করেছি। তাতেও কাজ হয়নি। মেয়র, কাউন্সিলর ও বাজার ব্যবসায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দকেও জানিয়েছি। সেখান থেকে কোনো সদুত্তর পাইনি। বর্জ্য অপসারণের জন্য আমার হাতে এত বড় অঙ্কের প্রকল্প নেই। তবে এই বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জানাব।