চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে কাতার প্রবাসী স্বামীর পরকীয়ায়
বাধা দেওয়ায় অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন
জেসমিন আক্তার নামের ২ সন্তানের জননী ওই প্রবাসীর
স্ত্রী। উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের চরমঘুয়া গ্রামে
এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে একেরপর এক অপরাধ
সংগঠিত হলেও সঠিক সমাধান অধরা। বেয়াইনীভাবে বল
প্রয়োগের অনুযোগ আছে পুলিশ কর্মকর্তার
বিরুদ্ধেও। এই বয়সে প্রবাসীর পরকিয়ার বিষয়টি নিয়ে
স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, চরমঘুয়া গ্রামের
বশির উল্যা চোকিদারের ছেলে মিলন হোসেন’র সাথে
একই উপজেলার পূর্ব বড়ালী গ্রামের আবুল হোসেন
গাজীর মেয়ে জেসমিনের সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ
বন্ধন সৃষ্টি হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের ঘরে মিরাজ
হোসেন (১৭) ও জাহিদুল ইসলাম (১৩) পুত্র সন্তান রয়েছে।
জীবিকার তাগীদে স্বামী মিলন হোসেন কাতারে প্রবাস
জীবন যাপন করলেও সম্প্রতি সময়ে একই গ্রামের রফিক
মিস্ত্রির মেয়ে মিনু আক্তারের সাথে পরকিয়ায় প্রেমে
জড়িয়ে পড়ে মিলন।
এদিকে প্রবাসে বিপদের কথা বলে স্ত্রী জেসমিন আক্তারের
নামে ব্র্যাক এনজিও থেকে দশ লক্ষ টাকা ও স্ত্রীর বিভিন্ন
স্বজনদের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা হাওলাত বাবৎ হাতিয়ে
নেয় মিলন। ওই টাকা হাতিয়ে নিয়ে স্ত্রীর অগোচরে মিলন
হোসেন প্রবাস থেকে দেশে এসে পরকিয়া প্রেমিকার
সাথে সময় কাটিয়ে পুনরায় প্রবাসে চলে যায়।
বিষয়টি টের পেয়ে স্ত্রী জেসমিন আক্তার কিশোর বয়েসের
এই সন্তানদের কথা বিবেচনা করে পরকিয়া থেকে সরে
আসতে অনুরোধ করলে নানা ভাবে হয়রানী ও নির্যাতনের
শিকার হতে হয় ২ সন্তানের জননী ওই গৃহবধুকে। এক
পর্যায়ে ২ সন্তানের পড়ালেখার খরচ ও পরিবারের খরচ দেয়া
বন্ধ করে দেয় প্রবাসী মিলন হোসেন।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধু জেসমিন আক্তার বলেন,
আমার স্বামী দীর্ঘদিন যাবৎ কাতারে প্রবাস জীবন
যাপন করে আসছেন। সে আমাকে বলছে বিদেশে ব্যবসা
বাণিজ্যের জন্য নগদ টাকার প্রয়োজন। আমাকে টাকা
দেওয়ার জন্য গ্রহণ করলে আমি ব্র্যাক এনজিও থেকে ১০ লক্ষ
টাকা লোন ও আমার স্বজনদের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা লোন
নিয়ে আমার স্বামী মিলন হোসেনকে দিয়েছি।
পরবর্তিতে জানতে পারলাম আমার স্বামী আমার অগোচরে
দেশে এসে একটি মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে
গুরুফেরা করে আবার চলে গেছে। আমি টের পেয়ে
সন্তানদের দিকে তাকিয়ে পরকিয়া থেকে সরে আসতে
বল্লে আমার বাসুর,ননদরা মিলে আমার স্বামীর ইন্ধনে
আমাকে নির্যাতন শুরু করে। কয়েকবার আমাকে
শারীরিকভাবে হামলার শিকার হতে হয়েছে। আমার সন্তানদের
পড়ালেখার খরচসহ পরিবারের খরচ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে
আমার স্বামী। সর্বশেষ গত ৯ নভেম্বর আমার বড় ছেলের
পড়ালেখার খরচ চালানোর জন্য আমি সিন্ধান্ত নেই বাসার
কিছু আসবাবপত্র বিক্রি করতে। কিন্তু আমার
ননদ,বাসুরসহ তারা আমার ওপর হামলা করে বাসার
আসবাবপত্র ভাংচুর করে। আমি থানায় অভিযোগ
দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, মানুষ বিপদে পড়লে থানা
পুলিশের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। তাই আমিও
করেছি। কিন্তু ফরিদগঞ্জ থানার (এসআই) একরামুল হক
আমি বেয়ানীভাবে বল প্রয়োগ করে আমার
স্বামীকে ডিভোর্স দিতে বলে। পুলিশের এমন আচরণ
আমি নিরিহ একজন নারী হয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে
বিচারের আহŸান জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত বাসুর, মিজানুর রহমান বলেন, আমার ছোট
ভাইয়ের বৌর সাথে পূর্ব থেকে আমাদের সাথে বিরোধ
চলে আসছে। আমরা তার সাথে কথা বলিনা, সে
বিভিন্নভাবে আমাদেরকে দোষারোপ করে আমার ওপর দায়
চাপিয়ে দেয়। তার অভিযোগের বিষয়টি মিথ্যে।
এদিকে অভিযুক্ত প্রবাসী মিলন হোসেন’র কাছ থেকে
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অভিযোগের বিষয়টি জানতে
চাইলে বক্তব্য দিতে রাজী হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ থানার উপপুলিশ পরিদর্শক
(এসআই) একরাম হোসেন বলেন, জেসমিনকে তালাকের
জন্য বল প্রয়োগ করার বিষয়টি সম্পন্ন ভিত্তিহীন। তাদের
বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিকে তাদের পারিবারিক
সমস্যা সমাধানের জন্য ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক
(তদন্ত) প্রদীপ মন্ডল স্যার’র নেতৃত্বে আলোচনা হয়েছে,
কিন্তু সমাধান হয়নি। বিষয়টি আমরা মানবিক
দৃষ্টিকোন থেকে সমাঝোতার জন্য চেষ্টা চালিয়ে
জাচ্ছি।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) প্রদীপ
মন্ডল বলেন, চরমঘুয়া গ্রামে ফোজদারী অপরাধ সৃষ্টি
হয়েছে। জরুরীসেবা (৯৯৯) এ কল পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল
পরিদর্শন করে উত্তপ্ত পরিবেশ শান্ত করে। যেহেতু
পারিবারিক বিষয় নিয়ে তাদের বিরোধ চলছে। বাদী-
বিবাদীর সংসার টিকবে কি টিকবেনা সেটা আমাদের
জানার বিষয় না। তবুও আমরা মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে
বিষয়টি মিমাংশার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।