পিয়ারুন বেগমের বয়স এখন ১১৫-এর কাছাকাছি। জীবনসায়াহ্নে এসে নতুন ঘরে উঠেছেন তিনি। মেয়ে টুলটুলি বেগমের নামে বরাদ্দ হওয়া মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘরে আশ্রয় মিলেছে তার। বয়সের ভারে নূ্যব্জ পিয়ারুন বলেন, ‘আমার কিছু ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর দিয়ে ভালো কাজ করেছেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন শেখ হাসিনার ভালো করেন।’
পিয়ারুনের মতো আরও ২৬৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে। এসব পরিবার সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছেন। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন তারা।
এই ২৬৬ ঘরের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর প্রথম পর্যায়ে ১০০ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১২০টি ঘর নির্মাণ করে উপকারভোগীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের ৪৪টি ঘরের মধ্যে ২১টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ২৩টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের ঘরগুলো ঈদের পরপরই ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হস্তান্তর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
খোকশাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাঁই মিলেছে মুক্তিযোদ্ধা, রিকশাচালক, দিনমজুর, বিধবা ও প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন পেশার লোকদের। তাদের বেশিরভাগই স্থানীয় ওয়াপদার ঢালসহ সরকারি খাসজমিতে ভাঙাচোরা খুপরি ঘর অথবা ভাড়াবাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। অনেকেই নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে ভাসমান জীবন যাপন করে আসছিলেন
সিরাজগঞ্জের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প খোকশাবাড়ীতে এসব ঘর নির্মাণের পাশাপাশি গ্রামেই শহরের মতো সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা হয়েছে। এখানে একটি মসজিদ, একটি খেলার মাঠ, বসার জন্য একটি গোলাঘর, ঘাটলাসহ একটি পুকুর এবং পানি নিস্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে।
স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে থাকা ১০ একর সরকারি খাসজমি অপদখলমুক্ত করে সাত একর জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পটি করা হয়েছে। বাকি তিন একর জায়গায় উপকারভোগীদের সুবিধার্থে খোকশাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ রাইফেল ক্লাব নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখানে ঘর পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তার হোসেন (৮০), শাহনেওয়াজ সরকার (৫৫), বিধবা কোহিনুর বেগম (৬৫), আলেয়া বেগম (৫৫) ও মাজেদা বেগমসহ (৫৫) সবাই উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করলেন।
সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, মুজিববর্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মধ্যে জমিসহ ঘর তুলে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। এর সঠিক বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পেরে নিজেদের গৌরবান্বিত মনে করছেন তারা।