মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ ||
হাজীগঞ্জের কালচোঁ দণি ইউনিয়নের ভাটরা গ্রামের আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মদীনাতুল উলুম মাদরাসার নিজস্ব ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ওই ইউনিয়নের ভাটরা ও ওড়পুর গ্রামের স্বার্থান্বেষী একটি মহল মাদরাসা ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতাদের সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন মাদরাসার ম্যানেজার মো. মিল্লাদ হোসেন।
এই ঘটনায় মাদরাসার মোহতামিম (অধ্য) ও সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ ইউছুফ আলী চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৫ ধারায় একটি অভিযোগ দায়ের (নং- ৩৬৫/২০২২) করেন। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে ওই সম্পত্তিতে অস্থায়ী স্থীতিবস্থাসহ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন। মাওলানা মোহাম্মদ ইউছুফ আলী ওই গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
অভিযোগে তিনি একই গ্রামের মৃত হাফেজ ইব্রাহিমের ছেলে মাওলানা আবুল বাশার ও মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে মো. আনোয়ার হোসনকে বিবাদী করেন। এদিকে সম্প্রতি সরকারি রাস্তা কেটে জোরপূর্বক দখল উল্লেখ করে মাদরাসার সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ ইউছুফ আলীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সম্প্রতি মাওলানা আবুল বাশার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এলাকাবাসী পক্ষে উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
মাদরাসার ম্যানেজার মো. মিল্লাদ হোসেন সংবাদকর্মীদের জানান, কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নে ভাটরা মৌজা ও ওড়পুর মৌজায় মাও. মোহাম্মদ ইউছুফ আলী গংদের প্রায় ২০ একর সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে ভাটরা মৌজায় মসজিদ ও আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মদীনাতুল উলুম মাদরাসায় প্রায় শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করে। এই মাদরাসায় কিছু এতিম শিশুও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যয়ভার বহন করছেন মাও. মোহাম্মদ ইউছুফ আলী ও তাদের পরিবার।
তিনি বলেন, মাদরাসা উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশে কিছু বসতবাড়ি রয়েছে। ওই সব দিকে তাদের নিজ নিজ চলাচলের পথ ও সরকারি রাস্তা রয়েছে। তারা ওই পথে চলাচল করেন। আবার অনেক সময় মাদরাসার নিজস্ব পথ ব্যবহার করে তারা চলাচল করে থাকেন এবং এখনো চলছেন। এতে করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাদের কখনো বাধা দেয়নি বা নাও করেনি। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে স্বার্থান্বেষী কিছু লোক মাদরাসার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটাচ্ছেন।
মিল্লাদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, এলাকার কিছু লোক উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত রাস্তাকে সরকারি রাস্তা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। আবার তারা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এলাকায় মানববন্ধনও করেছেন। যা মাদরাসার সম্পত্তি দখল করার অপচেষ্টা মাত্র। এতে করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বিভ্রতবোধ করছেন। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মদীনাতুল উলুম মাদরাসার মোহতামিম (অধ্য) ও সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ ইউছুফ আলী বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী লোক সরকারি রাস্তার কথা উল্লেখ করে মূলত মাদরাসার নিজস্ব ও ভোগ-দখলকৃত সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করছেন। তারা তাদের হীনস্বার্থ হাসিল করার উদ্দেশ্যে এলাকার মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আমার ও মাদরাসার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমি ন্যায়-বিচার প্রার্থনায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। যদি এখানে কারো সম্পদ থেকে থাকে, তাহলে তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (দলীলপত্র) উপস্থাপন করে তাদের সম্পত্তি নিয়ে যাক। আমার কোন আপত্তি নেই। তবে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে অযথা হয়রানি করা দুঃখজনক।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, যেহেতু এলাকার লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ এবং মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আদালতের অভিযোগ দিয়েছেন। আশা করি বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধান হবে। তবে মানুষের চলাচলের পথ যেন উন্মুক্ত থাকে এবং এই পথটি যেন বন্ধ না হয়, সেজন্য তিনি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সুদৃষ্টি কামনা করেন।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি। এলাকাবাসীর পক্ষে একজন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এবং মাদরাসা কর্তৃপক্ষও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি সরজমিন পরিদর্শন করে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।