মনিরুল ইসলাম মনির:
অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, অপ্রতুল বেড সংখ্যা, জলাবদ্ধতা, বিশুদ্ধ পানির অভাব এমনই অবস্থা ছিল
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা
কর্মকর্তা ডা. মো. আসাদুজ্জামান জুয়েলের প্রচেষ্টায় বদলে যাচ্ছে হাসপাতালের চিত্র। সেবার
মান বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। রোগীরা ঔষধও পাচ্ছে নিয়মিত। রোগী ও
স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে আশার আলো। হাসপাতাল চত্বর ও রাস্তার দু’পাশে ফুল বাগিচায়
বিভিন্ন প্রজাতির ফুল শোভা পাচ্ছে।
এখন হাসপাতালে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে পুষ্প শোভিত বাগান। আগে যে স্থানটি এক
সময়ে গো-চারণ ভ‚মি হিসেবে ব্যবহার করেছে স্থানীয়রা। হাসপাতালের ভবন গুলোর চারদিকে
বাগান তৈরি করে তাতে নতুন চারা রোপন করা হয়। ভবনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট বড় নর্দমা
গুলো পরিস্কার পরিছন্ন রাখছে হাসপাতাল পরিছন্নকর্মীরা।
এছাড়াও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৩১ শয্যার এই হাসপাতালে গাইনি কনসালটেন্ট থাকায়
স্বাভাবিক প্রসব বৃদ্ধি, নিজস্ব অর্থায়নে রাতে আলোকসজ্জা, উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায়
সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, বহিঃবিভাগে রোগীদের বসার ব্যবস্থা। ইতিমধ্যেই হাসপাতালটি ৫০
সজ্জায় উন্নতি হলে কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি।
সরেজমিনে জানা যায়, জনবল কম থাকলেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে রোগীদের সেবা দিয়ে
যাচ্ছেন কর্মকর্তা ডা. মো. আসাদুজ্জামান জুয়েল। মাঠ পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক
নিয়মিত পরিদর্শন করেন বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এতে করে মাঠ
পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা ও অনেক গতি পেয়েছে।
হাসপাতালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে চিকিৎসা নেয়া রোগী ছিল যথাক্রমে
বহিঃবিভাগ ৫৯ হাজার ৯১৩, আন্তঃবিভাগ ৩ হাজার ৭৬৭ ও জরুরি বিভাগের ৪ হাজার ৮৮৯ জন।
২০২২ সালে চিকিৎসা নেয়া রোগী ছিল যথাক্রমে বহিঃবিভাগ ৫৫ হাজার ৪৫৫, আন্তঃবিভাগ ৩
হাজার ২৭২ ও জরুরি বিভাগের ৩ হাজার ৫৭৯ জন।
এবং ২০২৩ সালে চলতি ৩ মাসে চিকিৎসা নেয়া রোগী ছিল যথাক্রমে বহিঃবিভাগ ১৯ হাজার
৩৪৫, আন্তঃবিভাগ ৯’শ ৬২ ও জরুরি বিভাগের ১ হাজার ৫৮৪ জন।
সেবা নিতে আসা এক রোগী রহিমা বেগম জানান, আগের তুলনায় হাসপাতালটির অনেক
পরিবর্তন হয়েছে।
উপজেলার বাসিন্দা মুছা আহাম্মেদ ও আবু হানিফ অপু বলেন, ডা. আসাদুজ্জামান জুয়েল
হাসপাতালটি খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন। প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকলেও তিনি ও অন্যান্য
চিকিৎসকরা যে কষ্ট করেন তা প্রশংসনীয়।
সিনিয়র স্টাফ নার্স মিনহাজ উদ্দিন বলেন, হাসপাতালে আসা রোগীদের সেবা দিতে পেরে
আমরা আনন্দিত। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা, হাসিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালটি এখনো ৩১ শয্যায়
রয়েছে। ৫০ শয্যার শুধু ভবনই নির্মিত হয়েছে। এখনো ৫০ শয্যার লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়নি।
এরই মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে ১২জন ক্যাডার অফিসার ও ৩ জন কন্সালটেন্টসহ,
নার্স ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে কাজ করছি।
৫০ শয্যার জনবল নিয়োগের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জুয়েল জানান,
যতটুকু সম্ভব হাসপাতালের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এলাকার মুরুব্বী আর সচেতন লোকজনের
সাথে আমি মাঝে মধ্যে হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করি। আর এখানে
কর্মরত চিকিৎসকরা অনেকটা সচেতন ও মানবিক। তারা সব সময় রোগীদের চিকিৎসা প্রদান
করে যাচ্ছেন। ছোট খাটো কোনো অভিযোগ হলে বিষয় গুলো আমি সমাধান দিয়ে থাকি।
যাতে চিকিৎসা সেবা বিন্দু মাত্র সমস্যা না হয়।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটিতে সেবার মান বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন পর্যায়ের সহযোগিতায় বেশ কিছু কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছি। আরো সংস্কারের
কাজ অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হবে।
পরিশেষে তিনি আরও বলেন, মোটকথা মানুষের দ্বার গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে
এগিয়ে চলেছে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।