চাঁদপুরের কচুয়ায় মকবুল হোসেন নামে প্রায় ষাট বছর বয়সী এক চা দোকানির গায়ে কেটলির ফুটন্ত লিকার ঢেলে শরীর ঝলসে দিয়েছেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক মাহবুব আলম। শুধু তাই নয়, তাকে করা হয়েছে মারধর, ভাংচুর করা হয়েছে তার দোকানটিও। কচুয়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কোয়া নামক এলাকায় ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। আহত ওই দোকানিকে উদ্ধার করে ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে কোন চিকিৎসা না দেওয়ায় তাকে নিয়ে ভর্তি করা হয় পাশ^বর্তী হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওই চা দোকানির পিঠসহ শরীরের ৬/৭ শতাংশ ঝলসে গেছে।
ভিকটিম চা দোকানী মকবুল খান বলেন, আমার অভাবের সংসার। চায়ের দোকাদারি করে ডাল-ভাত খেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোনরকম বেঁচে আছি। আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানের বাড়িও একই এলাকায়। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এক ছেলে এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট চাইলে তার কাছে আমি ৩৫০ টাকা রাখি। যেটি আমি কিনেছি ৩২০ টাকায়। তবে এই সিগারেটের প্যাকেট ভাইস চেয়ারম্যানের জন্য জানার পর ২০ টাকা ফেরত দিতে চাইলেও ওই ছেলেটি টাকা না নিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরই ৭-৮ জন ব্যক্তিসহ ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম এসে আমাকে দোকান থেকে বের হতে বলে। আমি তাদের দেখে ভয়ে দোকান থেকে বাইরে বের হইনি। একপর্যায়ে চায়ের ট্রে’র মধ্যে থাকা প্রায় ২৫টি কাপ ও তিন কেজি চিনি ফেলে দেয়। এরপর কেটলির গরম লিকার আমার গায়ে ঢেলে দেয়। এ সময় আমি কান্নাকাটি করলেও তাদের মন গলেনি।
তিনি বলেন, কচুয়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলেও সেখানে আশপাশে তাদের লোকজন থাকায় ভর্তি হতে পারিনি। পরে আমার জামাইয়ের সহযোগিতায় ভ্যানে করে বাড়িতে যাই। সকালে আমি হাজীগঞ্জ হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসকরা ভর্তি করেন।
ভিকটিমের ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফয়সাল বলেন,আমার বাবার গায়ে কেটলির গরম পানি ঢেলে দেয়া হয়েছে। মারধর করা হয়েছে। তার পিঠ ও হাতের একাংশ ঝলসে গেছে। দোকান ভাংচুর করা হয়েছে। এক সুযোগে আব্বা সেখান থেকে পালিয়ে আসছে। তা না হলে তারা আমার বাবাকে সেখানেই মেরে ফেলতো। পরিবারে অভাব ও ঋণ থাকায় আমরা দিনে দোকানে বসি, আর বাবা রাতে দোকান চালান। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর আমরা আতংকের মধ্যে আছি। কারণ, তারা খুবই প্রভাবশালী।
ভিকটিমের ভাই নসিমন চালক আরিফ বলেন, গভীর রাতে সিগারেটের প্যাকেটের দাম ২০ টাকা বেশি রাখার অভিযোগে আমার বড় ভাইয়ের গায়ে গরম লিকার ঢেলে দেয়া হয়। এ সময় দোকান ভাংচুর করা হয়। তিনি বলেন, আমরা অসহায় হওয়ায় এর আগেও সিগারেট নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যানের ভাই পৌরসভার কাউন্সিলর মামুন তাকে মারধর করে। তাদের কাছে সিগারেট বিক্রি করলেও দোষ, না করলেও দোষ।
হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. জালাল উদ্দিন বলেন, একজন লোক আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমাদের জরুরী বিভাগে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এখনই কথা বলতে পারবো না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কচুয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম বলেন, আমি এ ঘটনার
সময় পাশে ছিলাম কিন্তু এর সাথে আমি জড়িত না।
কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইব্রাহিম খলিল জানান,অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।