কয়েক দিন পরেই ঈদুল ফেতর। এর মধ্যেই হঠাৎ করে একদিনে ব্যবধানে সয়াবিনের দাম ২০ টাকা এবং পাম অয়েলের দাম প্রতি লিটারে ২৫ টাকা বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও তেল মিলছে না। সেইসঙ্গে বাজারে কমেছে সয়াবিনের সরবরাহ। রমজানের কয়েকদিন আগেও ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ঈদ সামনে রেখে ভোজ্যতেলের চাহিদা বাড়ায় বাজারে এখন সয়াবিনের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। মিল মালিকরা সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। সরকার প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু ওই দামে বাজারে পাম অয়েল পাওয়া যায়নি। এক মাস আগে ছিল ১৪০ টাকা লিটার। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০ টাকা। সয়াবিন দুই দিন আগে ছিল ১৬০ টাকা। রোববার বাজারে প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, তেল নিয়ে যাতে ঈদের আগে নতুন করে নৈরাজ্য না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দাম বেড়ে যাওয়ার তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। আমরা ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করব।
তিনি বলেনস, কোনো দেশ এখন যদি রপ্তানি বন্ধ করে, এতে দেশের বাজারে এখনই দাম বেড়ে যাওয়ার কথা নয়। কারণ এই প্রভাব বাজারে পড়তে সময় লাগবে। আমরা তা খতিয়ে দেখছি। পাশাপাশি ভোজ্যতেল নিয়ে যাতে কোনো ধরনের কৃত্রিম সংকট না করতে পারে, সেজন্য পর্যাপ্ত নজরদারি করা হচ্ছে। মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
জানা যায়, দেশে বছরে শিল্প ও খাদ্য মিলে সাড়ে ২৪ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২০ লাখ টন ব্যবহৃত হয় খাদ্য হিসাবে। বাকি ৪ লাখ টনের বেশি ব্যবহৃত হয় শিল্প খাতে। দেশে মোট চাহিদার ৬৭ শতাংশই পাম অয়েল দিয়ে মেটানো হয়। এর মধ্যে খাদ্যের চাহিদা ৫৮ শতাংশ। ৩৭ শতাংশ মেটানো হয় সয়াবিন তেল এবং বাকি ৫ শতাংশ অন্যান্য তেল দিয়ে। সয়াবিনের চেয়ে পাম অয়েলের আমদানি বেশি হলেও বাজারে বেশি পাওয়া যায় সয়াবিন তেল। অনেক সময় সয়াবিনের নামে পাম অয়েল বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া যায়।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি চেয়ারম্যান ড. গোলাম রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়লে দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়বে-এটাই স্বাভাবিক। তবে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে ৩০ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছে। সে মোতাবেক তদারকি জোরদার করতে হবে।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা করতে হবে। যদি দাম বাড়াতে হয়, তবে সরকারের পক্ষ থেকে ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় আর কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায়, তা পর্যালোচনা করে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে। তেল নিয়ে যাতে নৈরাজ্য না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। পাশাপাশি টিসিবির মজুত বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের কাছে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ বাড়াতে হবে। এতে সাধারণ মানুষ একটু হলেও স্বস্তিতে থাকতে পারবে।
সূত্র জানায়, দেশে সয়াবিন ও পাম অয়েলের চাহিদার চেয়ে বেশি মজুত রয়েছে। যে পরিমাণ অপরিশোধিত তেল আমদানি হয়েছে, সেগুলো দিয়ে কমপক্ষে আরও তিন মাস চলবে।