ফরিদগঞ্জ উপজেলা পৌরসভার ক্যাশিয়ার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) গিয়াস উদ্দিনের পাহাড় সমান সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। আছে নগদ টাকাসহ রায়পুরে বিলাশবহুল বাড়ি ও দোকানপাটসহ ক্রয়কৃত সম্পত্তি।
জানা যায়, মৃত কর্মচারির প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা নয়-ছয়, পৌরসভা কর্মচারিদের বেতন ও মাস্টাররোলের কর্মচারিদের ছাটাই করে বেতন আত্মসাৎ করতেন, পৌরসভার দুই উদ্যোক্তাকে ষড়যন্ত্র করে করেছেন ছাটাই, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রায় সময় আলোচনায় আসতেন, সাধারণ মানুষ ও কর্মচারীরা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করলেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে চলছেন ভিআইপি হিসেবে। সরকারি চাকরি করা সত্বেও নির্বাচনের সময় নৌকা মার্কা ভোট চেয়ে নামতেন প্রচারনায়, এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ক্যাশিয়ার গিয়াস উদ্দিনের পাহাড় সমান সম্পত্তির তথ্য, রায়পুর উপজেলা কেরোয়া গ্রামের দেওয়াঞ্জি বাড়ি জন্ম গ্রহণ করে গিয়াস উদ্দিন। বাড়ি থেকে একটু সামনে এসে সড়কের পাশে চার তলা বিশিষ্ট একটি বিলাসবহুল বাড়ি, নিজ গ্রামে ডুকতে ডানপাশে রয়েছে একটি মার্কেট, তার পাশেই ক্রয় করেছেন জমি। স্থানীয়রা বলেন, এগুলো দেওয়াঞ্জি বাড়ির গিয়াসউদ্দিনের সম্পত্তি। বাড়িটা ও দোকান সে করেছে।
তিনি নিজেকে সকল ক্ষেত্রে ক্যাশিয়ার পরিচয় দিলেও তিনি একজন ছায়া মেয়রের মত ফরিদগঞ্জ পৌরসভার জনসাধারন ও সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে আচরণ করেন।
পৌরসভা, উপজেলা প্রশাসনসহ সকল প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যয় এবং সকল কার্যক্রম অনলাইন পদ্ধতিতে সংরক্ষন করা হলেও ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় তা হয়না। অত্র পৌরসভায় সকল ব্যয়ের চেক বাহক চেকের মাধ্যমে ভাঙ্গানো হয়, সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কোন চেক একাউন্ট পে হয়না। এসকল কিছুর পিছনে কারসাজি তিনি সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখেন। যে কর্মচারী তার কথা না শুনবে না তার বিরুদ্ধে মেয়রের কাছে উল্টাপাল্টা নালিশ করে ওই কর্মচারীকে শোকজ, সাময়িক বরখাস্ত এমনকি বেতন বন্ধের ব্যবস্থা করা হয়।
২০২১-২২ইং অর্থবছরের শেষ সময়ে সরকারি অনুদানকৃত ২৮,০০,০০০.০০ (আটাশ লক্ষ) টাকা উত্তোলন করে কর্মচারীদের আনুতোসিক ও ভবিষ্য তহবিলে জমা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও তিনি তা করেন নি। সরকারি বিধির তোয়াক্কা না করে ছোট ছোট ভুয়া বিল ভাউচার (পঁচিশ হাজার টাকার প্রজেক্ট) করে তিনি পৌরসভার অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে জানা যায়।নগর উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৫,০০,০০০.০০ (পঁয়ত্রিশ লক্ষ) টাকা গরমিলের অভিযোগ ও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সকল ক্ষেত্রে তার কমিশন বানিজ্য আছে, পৌরসভার বিল আনতে গেলে মানুষ তার কাছে ভিক্ষুকের মত বসে থাকতে হয়। পৌরসভার ব্যাংক একাউন্ট কয়টি জানতে দেন না কাউকে, এমন কি একাউন্টে সকালে টাকা জমা দিলে বিকালে থাকে না, সব সময় একাউন্ট খালি থাকে, বিভিন্ন সময় প্রকল্পের টাকা চেক দিলে, ব্যাংকে গেলে গ্রাহকরা দেখেন একাউন্টে কোন টাকা নেই।
আবুল কাশেম, লুৎপুর রহমান, ইসমাইল হোসেন, আব্দুল খালেক, আব্দুল মান্নান, হাবিব উল্ল্যা, আফসার উদ্দিন মোল্লা এই কর্মকর্তাদের নামে রাজস্ব তহবিল থেকে ২ লক্ষ টাকা করে গোপনে লোন নেন ক্যাশিয়ার এই কর্মকর্তারা। লোনের ব্যাপারে জানেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে, পরবর্তীতে এই কর্মকর্তারা যখন নিজেদের প্রয়োজনে রাজস্ব থেকে লোন চাইলে এইগুলো প্রকাশ পায়।
ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আজিজ নামে এক যুবক অভিযোগ করলেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ছাড় পেয়ে যান বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার কয়েক জনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ক্যাশিয়ার গিয়াসউদ্দিন মেয়রের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অনিয়ম দুর্নীতি করে, এসবের সাথে জড়িত মেয়রের মেয়ে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুন নাজার অনি। সেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পৌরসভায় করেছেন অনেক দুর্নীতি। এসব নিয়ে কেউ কথা বললে হুমকি-ধমকি ও মামলার ভয় দেখাতো, তাই কেউ ভয়ে কথা বলতো না।
এই দিকে ক্যাশিয়ার গিয়াস উদ্দিন ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে পালিয়ে রয়েছেন, তার মোবাইলে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে তিনি ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় যোগদান করেন। যোগদানের পরই তিনি ফরিদগঞ্জ পৌরসভার নিয়োগকৃত ক্যাশিয়ারকে বদলী করান এবং তৎকালীন মেয়রের মাধ্যমে তিনি ক্যাশিয়ার (অঃ দাঃ/ভারপ্রাপ্ত) এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অদ্যবদি তিনি উক্ত পদে বহাল আছেন।