জহিরুল ইসলাম জয় :
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় চলতি বছর ইরি- বরো চাষাবাদ হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে গত এক মাসে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর ফসলি জমির ধান কৃষকের ঘরে মওজুদ করে ফেলেছে। এখন শেষ দিকে এসে ব্যস্তো সময় পার করছে কৃষকরা। সকাল থেকে সন্ধ্যাকালীন কৃষকদের ধান মাড়ানো খর বাড়ীর আঙ্গিনায় ছোট বড় আকারে স্তফ করার কাজে সহযোগিতা করছেন তাদের স্ত্রী সন্তানেরা।
হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৯ হাজর হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। সেই সাথে ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। বিগত বছরেও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ইরি আবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রায় ১০০ হেক্টর জমি কম থাকলেও বাম্পার ফলনের আশাবাদে কাজ করেছে কৃষি অধিদপ্তর।
ইতিমধ্যে পৌরসভাসহ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের কৃষি মাঠে প্রায় তিন শতাধিক প্রদর্শনী করা হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছর ধানের ন্যার্য মূল্য পাওয়ার লক্ষে কৃষকরা আবাদে ঝুঁকে পড়তে দেখা যায়। ধানের আশানুরুপ মূল্য ফেলে উৎপাদনের খরচে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন এখানকার কৃষকরা।
দেখা যায়, গত কয়েক যুগ ধরে হাজীগঞ্জ উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের কৃষি মাঠে দুই ধরনের ফসল উৎপাদন হয়ে আসছে। বিশেষকরে দক্ষিন অঞ্চলের মাঠগুলো নিচু হত্তয়ার কারনে ও একাধিক ব্রিক ফিল্ড গড়ে উঠায় শুধু মাত্র খড়া মৌসুমে ইরি-বোরো চাষাবাদ ছাড়া অন্য কোন ফসল উৎপাদন করতে দেখা যায় না।
উপজেলার উত্তর অঞ্চলের কৃষি মাঠে তিন ধরনের ফসল উঠতে দেখা যায়। বর্ষার সময় আউস ধানের ফলন, খরা মৌসুমে তিন মাসের রবি শস্য ফলন উৎপাদন শেষে ইরি বোরো ধানের চাষাবাদ হয়। যে কারনে উত্তর অঞ্চলের এখনো প্রায় ৫শ একর কৃষি জমির ধান মাঠে পড়ে আছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এখানকার কৃষকরা গত এক মাসে পুরো দমে ব্যস্তো সময় পার করছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জমির ফসল ঘরে তোলার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। কখনো রোদেলা দুপুর শেষে বিকাল ঘনিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকরা মাঠের ধান কাটা থেকে শুরু করে মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্তো।
উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন, রমিজউদ্দিন, আমির হোসেন ও আক্তার হোসেন বলেন, মূলত রমজান মাস থেকে আমরা ধান কাটা শুরু করেছি। এখন মাঠে তেমন কোন ফসল নেই। তবে খেরের পালার কাজে ব্যস্তো।
হাটিলা গ্রামের কৃষক জসিম, আজাদ ও শুকু মিয়া জানান, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমরা ধান কেটেছি। তবে শেষ দিকে এসে বৃষ্টিতে কিছুটা বেঘাত পড়তে হয়। তার পরেও ধানের ন্যায্যমূল্য ফেলে কষ্ট দূর হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, ‘চলতি মৌসুমে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ হয়েছে । সেই লক্ষ্যে কৃষকরা এবার জমিতে জিরাশাইল, পারিজা, ব্রি-২৮, ২৯ ও ৫০ এবং বি-আর ১০ জাতের ধান লাগিয়ে ভাল ফলন করতে পেরেছে। সেই সাথে উন্নত জাতের ধান প্রদর্শনী প্রজেক্টের লক্ষে সরকারি প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে আনুমানিক ২৫০ টির বেশী প্রদর্শনী হয়েছে। এসব প্রজেক্ট আমরা পৌর এলাকাসহ পুরো উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪/৫ টি করে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রেখেছি। আবহাওয়ার সর্তকতা তুলে ধরে এ কর্মকর্তা ইতিপূর্বে উপ-কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছেন কাচা পাকা ধান যেন কৃষকরা দ্রুত কেটে নেয়।
কৃষি অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ছোট বড় দেড় শতাধিক কৃষি মাঠ রয়েছে। যা থেকে এ বছরেও ফসল উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। তবে এ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা গত কয়েক বছর ধরে সমান ভাবে থাকলেও চলতি বছরে আরো ভাল লক্ষমাত্রা অর্জন হবে বলে দাবি উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের।