তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে রাজধানীতে জনশক্তি রপ্তানি কার্যক্রমের ব্যবসা পরিচালনা করে রেমিট্যান্স আহরনের মাধ্যমে নিজ ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতা করে আসছেন। পাশাপাশি তাঁর প্রতিষ্ঠানের অধীনে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগে হয়েছে।
মোহাম্মদ হাসান মিয়াজী তাঁর আয়ের সিংহভাগ মানবহিতৈষী কাজে ব্যয় করেন। ব্যবসায়ীক সূত্রে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় থাকলেও তিনি নিয়মিত গ্রামের বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন এবং মানবিক কাজ-কর্ম করে থাকেন। এর মধ্যে তিনি তাঁর ব্যক্তি উদ্যোগে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অস্বচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা, বসতঘর ও রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে (মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দির) ও ধর্মীয় কাজে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন।
পাশাপাশি অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তানদের পড়ালেখা খরচ প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিবাহে আর্থিক সহযোগিতাসহ অসংখ্য মানবিক কাজ করেছেন মোহাম্মদ হাসান মিয়াজী। তাঁর মাধ্যমে অসংখ্য লোক, পরিবার ও প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে এবং হচ্ছে। আজকাল অনেকেই কিছু পাওয়ার আশায় মানবিক কাজ করে থাকেন। অথচ তিনি প্রচারহীন, নিরবে-নিবৃত্তে এবং বিরামহীন পরোপকার করে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু দুষ্ট লোকের কারণে কিছু সময়ের জন্য তাঁর এই মানবিক কাজ থেকে অসহায় মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠান বঞ্চিত হচ্ছে।
কারণ, তিনি একাধিক মামলার আসামি হয়ে জেল খেটেছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার এবং কিছু দুষ্ট লোক উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে তাকে হয়রানি করেছেন। এতে তিনি ব্যবসায়ীক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাঁর মান-সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। এর মধ্যে তাঁকে হত্যা মামলার আসামি করাও হয়েছে। যা অত্যান্ত দুঃখজনক বলে জানান, হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই পরিবারের স্বজন, বাড়ি ও এলাকার লোকজনসহ ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ।
জানা গেছে, গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতের কোনো এক সময়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, উত্তর বড়কুল গ্রামের কালা সীতানাথ বাড়ির উত্তম চন্দ্র বর্মণ ও তার স্ত্রী কাজলী রানী বর্মণ। পরের দিন সকালে পুলিশ তাদের মরদেহ উদ্ধার করে এবং এই ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিহত দম্পতির মেয়ে রিনা রানী বর্মণ। এই মামলায় পুলিশ রহস্য উদঘাটন করে এবং চুরির উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানায়।
পরবর্তীতে মামলার ১০ জন আসামির মধ্যে সোহাগ মুন্সী ও মিজান নামের দুই জন আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দী দিয়ে তাদের অপরাধ স্বীকার করে এবং এই হত্যাকাণ্ডের সাথে আরও যারা জড়িত, তাদের নাম প্রকাশ করে। অথচ গত বছরের ২৭ অক্টোবর হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ হাসান মিয়াজীকে আটক এবং এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তিনি ১৯ দিন জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান। যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও কিছু দুষ্ট লোকের ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন স্থানীয় ও এলাকাবাসী।
যেদিন উত্তম চন্দ্র বর্মণ ও কাজলী রানী বর্মণ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন এবং পুলিশ তাদের মরদেহ উদ্ধার করে, ওইদিন হাসান মিয়াজী ঢাকায় ছিলেন। আসামি সোহাগ ও মিজানের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে হাসান মিয়াজীর নাম উল্লেখ নাই এবং আসামীরা চুরির উদ্দেশ্যে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন মর্মে স্বীকারোক্তি দেন। এছাড়াও মামলার অপর ৮ জন আসামি, মামলার বাদী ও ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজন, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জনসাধারণের মধ্যে কেউ তাঁর সম্পৃক্ততার কথা বলেন নাই।
এছাড়াও মামলার এজাহারে হাসান মিয়াজীর নাম উল্লেখ্য নাই। তারপরও তাঁকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তাই এই ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায়-বিচার প্রত্যাশা করে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের (আইজিপি) কাছে লিখিত আবেদন করেছেন মোহাম্মদ হাসান মিয়াজী।
গত ২০ আগস্টের আবেদনে (এসআই-৪৫২) মোহাম্মদ হাসান মিয়াজী উল্লেখ করেন, অসাধু ব্যক্তির প্ররোচনায় ও আর্থিকভাবে লাভবানের উদ্দেশ্যে তৎকালীন হাজীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুর রশিদ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যান এবং হত্যা মামলার আসামি করার কথা উল্লেখ করে ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
আবেদনে তিনি আরও উল্লেখ করেন, যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তিনি তাদেরকে কখনো দেখেন নাই এবং তাদেরকে চিনেন না। অথচ তাকে মানসিক ও শরীরিক নির্যাতনসহ অন্য মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়। তখন তিনি বাধ্য হয়ে ওসিকে ৫ লাখ টাকা প্রদান করেন।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ হাসান মিয়াজী বলেন, ওসি (তৎকালীন) আবদুর রশিদ অসাধু ব্যক্তির প্ররোচনায় পড়ে আমাকে হত্যা মামলার আসামি করেন। এতে আমি কারাবাসসহ সামাজিকভাবে আমার মান-সম্মান ক্ষুন্ন এবং ব্যবসায়ীকভাবে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছি। এ জন্য আমি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায়-বিচার প্রত্যাশা করে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের (আইজিপি) কাছে লিখিত আবেদন করেছি।
এসম তিনি আরও বলেন, যদি আমি অপরাধী হয়ে থাকি, তাহলে আমার শাস্তি হোক। নতুবা যে বা যাদের প্ররোচনায় আমাকে হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে এবং যারা ফাঁসিয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। যাতে করে ভবিষ্যতে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হয়।
গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আব্দুল গফুর পাটওয়ারী বলেন, হাসান মিয়াজী এই ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষের উপকার করেছেন। তিনি, এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি কিছুই হবেনা। তারপরও তিনি অসহায়-গরিব মানুষকে সবসময় সহযোগিতা করেন। নিজের টাকায় রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন কাজ করে দেন। এখন, এসব মানুষকে যদি অযথা হয়রানি ও লাঞ্চিত করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো ভালো মানুষ গ্রামে আসবেনা। অসহায় মানুষের পাশেও দাঁড়াবেনা।
এদিকে মোহাম্মদ হাসান মিয়াজীর অভিযোগ অস্বীকার করে তৎকালীন হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন।