বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজে শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত হবার আশংকা
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ ____
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের আমলে দেশের সর্বেেত্র ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। এই উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে নেই শিক্ষাব্যবস্থা। সরকার শিাব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগি করতে শিাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ থেকে এমপিওভুক্তি, শিক ও শিার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন এবং সর্বোপরি শিাসেবায় তথ্যপ্রযুক্তির নির্ভর করা হয়েছে।
সরকারের এই পদপেগুলো শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। সারাদেশের মতো হাজীগঞ্জ উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা) দিকে তাকালেই দেখা যায় একতলা থেকে চারতলা ভীতবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন এক বা একাধিক একাডেমিক ভবন, বাউন্ডারী ওয়াল ও গেইট। কোন অংশেই পিছিয়ে নেই প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে এর থেকে সম্ভবত একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ব্যতিক্রম রয়ে গেছে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ। উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও ১৯৯৬ইং সালের পর এই প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। অথচ সন্তোষজনক ফলাফল অর্জনসহ শিার আলো ছড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষাক্ষেত্রে উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয়দের প্রয়োজনের তাগিদে ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার প্রসারে ১৯৮৫ইং সালে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন বলাখাল বাজারে মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ফলাফলে নিয়মিত সন্তোষজনক অবস্থান থাকলেও বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কলেজটির আরো অগ্রগতি হয়। কিন্তু সরকারিভাবে অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন নেই।
১৯৯৬ইং সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সাংসদ মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের হাত ধরে চারতলা ভীত বিশিষ্ট দুইতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে সরকারিভাবে আর কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় অযত্ন ও অবহেলায় রয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম।
জানা গেছে, কলেজটিতে বর্তমানে ৪০ জন শিক্ষক ও কর্মচারী এবং ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তার পাশাপাশি বর্তমান শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৩’শ শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়াধীন। রয়েছে জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও ডিগ্রি পরীক্ষা কেন্দ্র। এছাড়াও এখানে সরকারিভাবে নিয়োগ পরিক্ষাও হয়ে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় শ্রেণিকক্ষের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পাশ্বরর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
এছাড়াও শ্রেণি সংকটের পাশাপাশি কলেজটিতে নেই বিজ্ঞান ভবন, আইসিটি ভবন, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব। অথচ এই সংকটের মাঝেও জেলাপ্রশাসক ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অঞ্জনা খান মজলিশের দিক-নির্দেশনায় এবং সাংসদের মনোনিত পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সন্তোষজনক ফলাফল অর্জন করে যাচ্ছে।
এখন কলেজে যেন দ্রæত পাকা ভবন (একাডেমিক ও বিজ্ঞান ভবন) নির্মাণ ও আইসিটি ল্যাব স্থাপন করা হয়, এ জন্য স্থানীয় ও এলাকাবাসী সাংসদের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন। তা না হলেও শ্রেণি সংকটের অভাবে পাঠদান ব্যহৃত এবং যথাযথ শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হবে শিক্ষার্থীরা, এমন আশংকা করছেন অভিভাবকেরা।
এ বিষয়ে স্থানীয় তসলিম আলম শিশির মজুমদার জানান, হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো বলাখালের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সাংসদ মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের সু-দৃষ্টি রয়েছে। তিনি এখানকার বলাখাল চন্দ্রবাণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বলাখাল জে.এন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজ, বলাখাল নূরে মদিনা আলিম মাদরাসাসহ এই এলাকার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন একাডেমিক ভবন করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ ইতিপূর্বে যারা পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা স্যারের (সাংসদ) সাথে যোগাযোগ করতে পারেন নাই। যার ফলে দীর্ঘদিন এই প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। তবে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি স্যারের সাথে যোগাযোগ করছেন। ইতিমধ্যে স্যার কলেজের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে দিয়েছেন এবং নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের কথা বলেছেন। আশা করি খুব দ্রæততার সাথে তা হবে।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের বিদ্যোৎসাহী সদস্য পারভেজ মজুমদার নিশাত জানান, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জেলাপ্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের নেতৃত্বে পাবলিক পরীায় ভালো ফলাফল অর্জন করে কলেজটি সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৯৬ইং সালের পর এ প্রতিষ্ঠানে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তবে আমরা আমাদের সাংসদ মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের সাথে যোগাযোগ করছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বর্তমান সরকারের আমলে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে ১৯৯৬ সালের পর এই প্রতিষ্ঠানে নতুন করে একাডেমিক ভবন নির্মিত না হওয়ায় তিনি সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগ ব্যর্থতাকে দ্বায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি সাংসদ মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে এবং আগামি দিনে যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।