জসিম উদ্দিন, ফরিদগঞ্জ:
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এখন আর দেখা মিলছেনা হাতে ভাঙ্গানো করাত শ্রমিকদের।যুগের সাথে তাল মিলাতে না পেরে যান্ত্রিকতার যুগে আবহমান বাংলার ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে গেছে কাঠ ভাঙ্গানো করাতীরা।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায় এখন যত্রতত্র স্থানে ডিজেল চালিত স” মিল কিংবা বিদ্যুৎ চালিত স” মিল দেখা মিলে। প্রায় ২ যুগ আগেও গ্রাম গঞ্জে কাঠ ভাঙ্গতে দেখা যেত তিন সদস্য বিশিষ্ট করাতী টিমের। কাঠ কিম্বা বাঁশ দিয়ে উঁচু মাচাল তৈরী করে তাঁর উপরে একজন আর নীচে দুজন লম্বা করাত টেনে চাহিদামত কাঠ ভাঙ্গিয়ে যেত করাতীরা। এজন্য তাঁরা হাত হিসেবে মূল্য নির্ধারণ করেনিত। সময়ের বিবর্তনে আর দেখা মেলেনা ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে যাওয়া করাতীদের।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পেশাদার করাতীরা বসবাস করতো। বিভিন্ন গ্রামে করাত কাঁধে ঘুরে ঘুরে শ্রম ফেরি করে বেড়াতো তাঁরা। হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তাঁরা কাঠ ভাঙ্গাতো। একেক বাড়ীতে ১ ধেকে ৭দিন পর্যন্ত কাঠ ভাঙ্গাতো করাতীরা। এই পেশায় যুক্ত থেকেই তাঁরা জীবন জীবিকা চালাতো। কিস্তু সময়ের বিবর্তনে বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় ফিকে হয়ে গেছে করাতীদের পেশাগত জীবন।
উপজেলার বালীথুবা,সানকি সাইর,ফনিসাইর,সহ বিভিন্ন গ্রামে পেশাদার করাতীরা ছিল। বর্তমানে সেসব করাতীরা ওই পেশা ছেড়ে জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছে। অনেকে এখন বার্ধকে উপনিত হয়েছে। প্রায় কুড়ি বছর আগেই বদলে গেছে করাতীদের পেশাগত জীবন। অবসান ঘটেছে করাতী কাজের। গ্রামীণ সকল হাট-বাজারেই রয়েছে কাঠ ভাঙ্গানো স’মিল। সময় সাশ্রয়ের সাথে খরচও পড়ে অনেক কম। তাই চাহিদা হারিয়ে ঐতিহ্যের করাত এখন আর শোভা পায়না করাতীদের হাতে।
এ ব্যাপারে ২ নং বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আবু সাদেক মেম্বর জানান, একসময় পেশাদার করাতিরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের কাঠ ভাঙ্গাতে শ্রম ফেরি করে বেড়াত। যান্ত্রিকতার যুগে বিলুপ্ত হয়েছে এই পেশা।
তবুও মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্থানে অনউন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বেশী মোটা ও লম্বা গাছ স” মেইলে নিতে অসম্ভব হলে ডাক পড়ে অন্য অঞ্চলের করাতিদের। কাঠ ভাঙ্গানোর কারণে অনেকেই বেঁচে আছে এ পেশার সাথে। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে করাতীদের জীবন কাটছে দূর্বিষহ। আবার অভিজ্ঞ করাতীদের অনেকে আর বেঁচেও নেই। যারা বেঁচে আছেন তাঁরাও বয়সের ভাড়ে এখন নুহ্য। তাই বাংলার ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে যাওয়া করাতীদের দেখা পাওয়া এখন দুরহ ব্যৗাপারও বটে।