নিজস্ব প্রতিনিধি :
হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, জুয়ারী ও মাদক সেবনকারী হাবিবুর রহমান ভূইয়া। তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তার উত্থান ২০০১ সালের বিএনপি জোট সরকারের আমলে। আর এখন বিএনপি ক্ষমতা না থেকেও হাবিব ভূইয়া তার এসব কার্যকলাপ প্রকাশ্যে বা গোপনে অব্যাহত রেখেছেন। অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলেই প্রতিবাদকারীরা তার হাতে হতে হয় নাজেহাল এবং তাদের উপর চালানো হয় পরিকল্পিত হামলা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাবিব ভূইয়া মুলত গোপালখোড় গ্রামের বাসিন্দা। কিন্তু ৮০ দশকে তার বাবা হাসমুতুল্লা মাষ্টার রামচন্দ্রপুর গ্রামের দর্জার মাথায় স্থানান্তর হয়ে রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা হয়। প্রভাবশালী এক নেতার ছত্র-ছায়ায় সন্ত্রাসী কায়দায় অলৌকিকভাবে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি হয়ে রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ ঘটে। আত্মপ্রকাশের পরপরই রামচন্দ্রপুরের বিশিষ্ট ধনকুবের রেহানউদ্দিনের রামচন্দ্রপুর বাজারের দোকানপাট দখল করে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। রেহানউদ্দিন চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে রেহানউদ্দিনের বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যায়। পরে রেহানউদ্দিন তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, চুরি ও লুটপাটের মামলা করে। তারপর থেকে পার্টির দোহাই দিয়ে বাজার ইজারাসহ বিভিন্ন দোকানদার থেকে প্রকাশ্যে দিবালোকে চাঁদাবাজি করে। বিশেষ করে জোট সরকারের আমলে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের জিম্মি করে চাঁদাবাজির বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এলাকার সাধারণ লোকজন প্রতিবাদ করলে তাদেরকে হত্যার হুমকি দেয় এবং মারধর করে। এহেন পরিস্থিতিতে এলাকার লোকজন নির্বিকার হয়ে পড়ে।
হাবিব ভূইয়া কিশোর গ্যাং, যুব গ্যাং, চুরির গ্যাং, ডাকাতির গ্যাং, মাদক গ্যাং, ভিক্ষুক গ্যাং, চাঁদাবাজির গ্যাং ও বিনোদন গ্যাং এলাকায় সৃষ্টি করে একক আধিপত্য বিস্তার করে। এসব গ্যাং দিয়ে ইউনিয়নে এমন কোন অপকর্ম নেই যে, হাবিব করেনি। এমনকি রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা আশরাফ উদ্দিন গাজীর মেয়েকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করতে বাধ্য করে। পরে আশ্রাফ উদ্দিন গাজী তার জান মালের ভয়ে হাবিব কে মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তার মেয়ের বিয়ের পর থেকে মেয়ের উপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। যাহা এখনো চলমান। বহুরুপী হাবিব ভূইয়ার ভয়ে তিনি ও তার পরিবার মুখ খুলতে পারছেন না।
তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গঠন করার পর হাবিবের মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধ কর্মকাণ্ড পাল্টে যায়। রামচন্দ্রপুর বাজারে চায়ের দোকান স্থাপন করে লোকচক্ষুর আড়ালে মদ, গাঁজা, ইয়াবা, সীসা ও বিভিন্ন ড্রাগস বেচা-কেনা করে এবং গোপনে চাঁদাবাজি চালিয়ে যায় এবং ব্যবসায় আনে নতুনত্ব ধারা ইউনিয়ন তরুণ প্রজন্মকে বিনোদন দেওয়ার জন্য আবিভূত হন এসকর্ট প্রভাইডার হিসেবে। ২০১০ সালে রামচন্দ্রপুর বাজার সিএনজি স্ট্যান্ডের চাঁদার ভাগাভাগি নিয়ে মৃত সেলিম পাটোয়ারীকে মারাত্মক ভাবে জখম করে। পরে সেলিম পাটোয়ারীর গ্রামের লোকেরা বিচার চাইতে গেলে হাবিব গ্রুপের লোকেরা সেলিম পাটোয়ারীর এলাকার লোকজনের উপর হামলা চালায় এবং সেলিম পাটোয়ারীর এলাকার লোকজনের সকল দোকানপাট ভাংচুর করে লুটপাট চালায় এবং তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে হাতেনাতে চুরির মালসহ তাকে গ্রেফতার করে। পরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের হস্তক্ষেপে সকল কিছুর ক্ষতিপূরণ দিয়ে ও এহেন ঘটনা কখনো করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে মুক্ত হয়।
এর পরের বছর (২০১১) সালে বাজারে প্রকাশ্যে দিবালোকে গাঁজা সেবনে স্থানীয় বাসিন্দা লিটন ফরায়েজি প্রতিবাদ করলে তাকে মারার জন্য ত্যাড়ে আসে এবং শুরু হয় হাবিব গ্রুপের সাথে সংঘর্ষ। এই সুযোগে হাবিব গ্রুপের লোকজন বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট লুটপাট করে নিয়ে যায়। পরে সেই ঘটনায় হাবিবসহ তার গ্রুফের লোকদের বিরুদ্ধে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও লুটপাটের মামলা হয়।
২০১৫ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রামচন্দ্রপুর বাজারে মাদকদ্রব্য তল্লাশি অভিযানে আসলে পরিকল্পিতভাবে হাবিব দলের দোহাই দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপর হামলা চালায়। ওই সময় এলাকার কয়েকজনসহ পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা ও ভাংচুরের মামলা দায়ের করে। গত কয়েক মাস রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ বাজার চলছে তার রমরমা মাদক ব্যবসা। এতে বাদ সাধে উদীয়মান কিছু তরুণরা। চলতি মাসের ৩ জুলাই এলাকার তরুনরা তার মাদক সেবনে বাধা প্রদান করলে হাবিব গ্রুপের লোকজন উদীয়মান তরুণদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। অতর্কিত হামলা ৪/৫ জন আহত হয়। প্রকাশ্যে এই ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দেখে অনেকেই হতভম্ব হয়ে পড়ে। পরে সাধারণ জনগণের ধাওয়া খেয়ে হাবিব তার দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়। তার এসব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রায় ডজনখানেক মামলা রয়েছে। এছাড়া সরকারী বিরোধী কর্মকান্ডে প্রকাশ্যে জড়িত থাকার অপরাধে হাজীগঞ্জ থানা তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। তার এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।