ঘোষণা ছিল এক যুগ আগেই। তখন একে এক অসম্ভব কল্পনা হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। কিন্তু ২০০৯ থেকে এক যুগেরও বেশি সময় পর সত্যি সত্যি বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে গেছে দেশের আনাচ-কানাচে।
দেশের প্রতিটি জনপদে, প্রতিটি ঘরে পৌঁছে গেল বিদ্যুৎ। এর মধ্য দিয়ে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করল সরকার।
পটুয়াখালীর পায়রায় সোমবার দুপুরে এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে এ ঘোষণা আসে।
এই আয়োজনে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা আসবে- সেটি আগেই জানানো হয়েছিল। তবে এই ঘোষণা সরকারপ্রধান দেননি। তিনি গত এক যুগে তার শাসনামলে বিদ্যুৎ খাতের এগিয়ে যাওয়া এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে আমরা আলো জ্বালতে পারলাম, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা, যে আমরা আলোকিত করেছি এ দেশের মানুষের প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে।’
অতীতে দেশের বিদ্যুৎ খাতের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ সব সময় সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ সব সময় পিছিয়ে যাচ্ছিল। ২১ বছর আর এরপর ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যারা সরকারে ছিল, আসলে এ দেশকে এগিয়ে নেয়ার কোনো আন্তরিকতা তাদের ছিল না।
বিদ্যুৎ খাতে বদলে যাওয়ার বাংলাদেশের গল্পটাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। রাঙাবালি, নিঝুম দ্বীপসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীর নিচ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। আর যেখানে গ্রিড লাইন নেই, সেখানে সোলার প্যানেল করা হচ্ছে।সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের পাহাড়ি অঞ্চল, আমাদের হাওর-বাঁওর অঞ্চল, আমাদের দুর্গম এলাকা- প্রতিটি জায়গায় কিন্তু আমরা সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুৎ দিয়ে দিচ্ছি। কোনো ঘর অন্ধকারে থাকবে না। প্রতিটি মানুষের জীবন আলোকিত হবে। এটাই তো আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’এর আগে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কথা জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি জানান, ২০০৯ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তখন দেশের মাত্র ৪৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত। এখন তা শতভাগে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মাত্র এক যুগের ব্যবধানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর সময় আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন শতভাগ বিদ্যুতায়ন।’
‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এই মূলমন্ত্র উজ্জীবিত হয়ে দুর্গম পাহাড় থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল, সব জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘দেশের দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন চরে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। দুর্গম পাহাড়ে গ্রিড লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। যেখানে সম্ভব হয়নি, সেখানেও বিকল্প ব্যবস্থায় সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুতায়িত করেছি আমরা।’
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, ‘পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পায়। যেখানে আজকে আমাদের দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১০০ ভাগ লোক বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এ অর্জন স্বাধীনতার ফসল ও জাতির পিতা আজীবন কষ্টের অর্জন।’