হাজীগঞ্জে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীন ও অস্বাস্থ্যকর বিভিন্ন শিশু খাদ্য সামগ্রী। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ও গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে নি¤œমানের ফলের জুস, রঙ্গিন ড্রিংক, চকলেট, ক্যান্ডি, চাটনি, চুইংগাম, ভাজা চিফস, ওয়েফার, লিচু, ডেইরি, আইচ পপসহ বিভিন্ন খাদ্যপন্যে সয়লাব হয়ে গেছে। যা শিশুদের নজর কাড়ে দারুণ ভাবে। এতে করে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে শিশু স্বাস্থ্য।
শিশুরা না বুঝে এবং রঙ্গবেরঙ্গের মোড়ক ও খেলনার প্রতি আৎকৃষ্ট হয়ে এসব বিষাক্ত খাদ্য সামগ্রী কিনে খাচ্ছে। এমনকি গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষসহ শিক্ষিত লোকজনও বুঝে না বুঝে শিশুর মুখে তুলে খাদ্য নামক এসব বিষ। যার ফলে এসব খাবার খেয়ে শিশুরা ডায়রিয়া, আমাশয়, বমি সহ নানা পেটের পীড়ায় ভুগছে এবং দীর্ঘ দিন এসব খাদ্য গ্রহণের ফলে জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যা তাৎখনিকভাবে আমরা উপলদ্ধি করতে পারছিনা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত অনুযায়ী, শিশুরা এসব খাবার খেলে নানা রকম পেটের অসুখ হয়ে থাকে। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন এসব খাবার গ্রহণের ফলে তাদের খুদামন্দা দেখা দেয়, স্নায়ু দূর্বল থাকে, মেধাশক্তি কমে যায়, পাকস্থলিতে আলসার হয় এবং এক সময় কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে। এছাড়াও শিশুদের শারিরিক, মানসিক ও রক্তকোষী বিকাশে দারুণ ভাবে বাঁধাগ্রস্থ করে এসব পুষ্টি ও মানহীন শিশু খাদ্যে।
উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেজি স্কুুল, মাদরাসা ও পাড়া মহল্লার বিভিন্ন শিশু-কিশোরদের শিা প্রতিষ্ঠান এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে ও আশপাশের মুদি দোকান, ভ্যারাইটিজ ষ্টোর, কনফেকশনারী ও চায়ের দোকানে বেশি পাওয়া যাচ্ছে এই শিশু খাদ্য সামগ্রী। আবার বাড়ি বাড়ি গিয়েও খোলা চানাচুর, চকলেট, চিফস, কদমা ও সন্দেশসহ মিষ্টি জাতীয় খাবার বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এসব খাদ্য পন্যে আকর্ষণীয় মোড়ক লাগিয়ে ও রঙ্গ-বেরঙ্গের প্যাকেটজাত করলেও তার গায়ে লেখা নেই উপকরণের তালিকা, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ। নেই সরকার অনুমোদিত বিএসটিআই এর সীল। আবার কোন কোন শিশু খাদ্যের প্যাকেটে বিএসটিআই এর সিল দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। অর্থ্যাৎ বিএসটিআই এর সিলের নিচে লেখা আছে বিএসটিআই অনুমোদিত নয়। যা তীক্ষè দৃষ্টি দিয়ে না তাকালে বুঝা যায়না।
এ দিকে মানহীন ও অনুমোদনহীন ভেজাল খাদ্য সামগ্রী, অপরদিকে এসব শিশু খাদ্যের প্যাকেটে প্লাস্টিকের খেলনা সামগ্রী দিয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবারকে আরো বেশি করে বিষাক্ত করে তোলা হচ্ছে। মুখরোচক এসব শিশু খাদ্যের চাহিদা প্রচুর থাকায় তিকর র তা বিক্রি করছে নির্বিঘেœ। এসব নিম্নমানের পণ্যের বেচাকেনা বাড়াতে খুচরা ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে লাভজনক এবং আকষর্ণীয় অফারও দেয়া হয়।
শিশুরাতো না বুঝে এসব খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করছে আবার সব দেখে শুনে ও বুঝেও শিশুদের বাহানার কাছে অসহায় সব পিতা-মাতা বা আত্মীয় স্বজন। তাই বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এ সব নিন্মমানের ভেজাল ও নকল খাদ্য শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছেন অবিভাবকরা। ফলে শিশুরা দিনের পর দিন স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে পুষ্টিহীন রোগ, পেটের পিড়াসহ নানা জটিল ও কঠিন রোগে। শিশুর সুস্বাস্থ্য নিয়ে মহা-বিপাকে পড়েছেন তারা।
দেশের বড়বড় শহর ও হাটবাজারগুলোতে ভেজাল নকল ও মানহীন শিশুখাদ্য প্রতিরোধে মাঝে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অভিযান নজরে এলেও উৎপাদনকৃত কারখানা, জেলা ও উপজেলার সদরে পাইকারি বিক্রয়ের স্থান ও খুচরা পর্যায়ে জোরালো কোন অভিযান পরিচালনা না থাকা এবং জনসচেতনতায় দৃশ্যমান কোন প্রচার-প্রচারণা ও কর্মসূচী না থাকায় এগুলো দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সচেতন মহল মনে করেন, কিছু বিবেকহীন মুনাফালোভী মানুষ ব্যবসার নামে হরহামেশা এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর ও মানহীন খাবার তৈরি করে বিক্রি করছেন। যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি সরূপ। আপনার-আমার এবং সবার সামনে এসব শিশু খাদ্য ক্রয়-বিক্রয় হলেও অজ্ঞাত কারণেই প্রশাসনের প থেকে তাদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আবার অভিভাবক হিসাবে আমরাও সচেতন হচ্ছিনা।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মাওলা বলেন, অস্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিহীন খাবারে শিশুর পেটের অসুখ ও খুদামন্দা দেখা দেয়। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন এসব খাবার খেলে পাকস্থলিতে আলসার হয় এবং এক সময় কিডনি অকেজো হয়ে যায়। এতে করে শিশুর শারিরিক ও মানসিক বিকাশে বাঁধাগ্রস্থ হয়। তাই ঘরে তৈরী খাবার শিশুকে খাওয়ানোর জন্য অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।