হাজীগঞ্জে শান্তিপূর্ন, আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে, নানা আয়োজনে ২৭টি পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব। রোববার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার পাঁচ দিনব্যাপী আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ২৯টি পূজামণ্ডপের মধ্যে ২৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা এবং ২টি মণ্ডপে ঘট পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ দিন হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদী, বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপ এলাকার পুকুর স্নান ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ঢাকের বাদ্য আর গান-বাজনা ছাড়া বিদায়ের করুণ ছায়ায় সারিবদ্ধভাবে একে একে নদী ও পুকুরের স্নান ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমা। এসময় ডাকাতিয়া নদী, মন্দির ও পুকুর পাড়ে ভক্ত দর্শনার্থীদের ঢল নামতে দেখা যায়।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বর্গলোক কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে আসেন দেবী দুর্গা। নির্দিষ্ট তিথি পর্যন্ত বাবার বাড়িতে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ের কৈলাসে স্বামীর বাড়িতে। দেবীর অবস্থানকালে এই পাঁচ দিন পৃথিবীতে ভক্তরা দেবীর বন্দনা করেন। বিজয়া দশমীতে পূজা উদযাপনের প্রধান আচারের অংশ হিসেবে এদিন নারীরা সিদুঁর খেলায় অংশ নেন। দুর্গার পায়ে সিঁদুর নিবেদন করেন, যা ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলার অংশ।
এই আচারটি দেবী দুর্গার শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তারপর হিন্দু নারীরা একে অপরের গায়ে সিঁদুর মাখিয়ে সমৃদ্ধি কামনা করেন। এরপর দেবী দুর্গার বিসর্জন দেখতে নদী, মন্দির ও মণ্ডপ এলাকার পুকুর পাড়ে জড়ো হন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা। প্রতিমা বিসর্জনের সময় অনেক ভক্ত অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। আবার অনেকেই ক্ষণটিকে সুন্দর করে কাটাতে নেচে-গেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি করে বিসর্জন উদযাপন করেন।
ভক্তরা জানান, সব কষ্ট দূর করে দেবী দুর্গা আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। একবছর পর মা আবার আসবেন। আমরা মায়ের কাছে দেশ ও জাতির মঙ্গলার্থে প্রার্থনা করেছি। তিনি যেন সকলের উন্নতি আর প্রগতিতে আমাদের জীবন ভরিয়ে দেন। পৃথিবীতে যেন শান্তি ফিরে আসে। বন্ধ হোক সকল অন্যায়, অবিচার ও দাঙ্গা, হাঙ্গামা। সেই সাথে সকলের মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনা করে দেবী দুর্গার নিকট প্রার্থনা করেন ভক্তরা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ইসলামী সংগঠনসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতায় এবং প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সনাতনী ধর্মাবলম্বী, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রোটা. রুহিদাস বনিক ও পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাধাকান্ত দাস রাজুসহ কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও সকলের সার্বিক সহযোগিতা শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে পৌরসভার ১২টি ও বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৭টিসহ মোট ২৯টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসবকে পালন করেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, প্রতিটি পূজামণ্ডপে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল এবং মণ্ডপে প্রশাসনের ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকসহ সার্বক্ষনিক গ্রাম-পুলিশ, আনসার ও থানা পুলিশের সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্বেচ্ছাসেবক, সাদা পোশাকে পুলিশ, মোবাইল টিম, ডিবি, র্যাব ও সেনাবাহীনির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল বলেন, অত্যন্ত আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে এবং সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হয়েছে। এজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানান।