গত ২৪ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপি একটি তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়। এরপর চলতি বছরের ২ জানুয়ারি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে আহ্বায়ক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ৫ সদস্যের আংশিক কমিটির ঘোষণা করে। যেখানে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, শরীফ আহমেদ টুটুল এবং সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিনকে। তবে এবার সেই আহ্বায়ক কমিটিকে ৩১ সদস্যে উন্নীত করার জোর তাগিদ দিয়েছে বিএনপির হাই কমান্ড। একই সাথে আগামী তিনমাসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলায় বিএনপির সকল ইউনিট কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে কমিটি করাসহ জেলা বিএনপির সম্মেলন করাও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি এই বিষয়ে লিখিত নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তবে এবার দলের মধ্যে কোন বিতর্কিত লোক, কোন নেতার ব্যক্তিগত পছন্দের লোক, কিংবা আর্থিক সুবিধা নিয়ে কোন আওয়ামী মার্কা লোককে পদায়ন করা না হয় সে বিষয়ে জোর দাবি জানিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাহিরে ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও বিএনপি নেতা, কর্মী ও সমর্থক এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও কোনঠাসা করে রাখে স্বৈরাচারী হাসিনার সরকারের দোসররা। একদিকে সরকার দলীয় ক্যাডারদের হামলা অন্যদিকে পুলিশি গ্রেফতারের কারনে অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতি। প্রায় দেড় যুগের এই সময়কালে নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করা ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মুখে অবশেষে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় স্বৈরাচারী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ জুড়ে যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়, সেই আনন্দ দ্বিগুন হয়ে ফিরে আসে বিএনপি নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। দীর্ঘ সময়ের আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতৃবৃন্দের মুখেও তৃপ্তির হাসি ভেঁসে উঠে, নতুন করে দেখতে শুরু করে স্বপ্ন। তাই এবার ত্যাগী ও প্রকৃত বিএনপি প্রেমিকদের দলে স্থান দেওয়ার বিষয়ের বিষয়ে তারা আশাবাদী।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যোগ্য লোকদের নিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, আহ্বায়ক কমিটিকে ৩১ সদস্যে উন্নীত করার বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আমরা রবিবার প্রোগ্রামটা শেষ করে আবার বসে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো। আমাদের কাজ এগিয়ে রেখেছি, এখন শুধু আনুষ্ঠিনকতাটা বাকি আছে। আমাদের অবশ্যই মে মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে জেলা বিএনপির সম্মেলন করতে হবে বলে কেন্দ্রের নির্দেশনা আছে। আমাদের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি হওয়ার পর তাদের সকলের সাথে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে যেটা ভালো এবং যেটা করার দরকার আমরা সকলে সিদ্ধান্ত নিয়েই সেটা করবো। অবশ্যই এই তিনমাস সময়ের মধ্যেই সব কিছু শেষ করে যথা সময়ের মধ্যেই জেলা বিএনপির সম্মেলন করা হবে।
এই বিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, কেন্দ্র আমাদেরকে এক সপ্তাহের মধ্যে ৩১ সদস্যে উন্নীত করার নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সেই অনুযায়ীই কমিটি করে জমা দিয়ে দেবো। আমাদের চেয়ারম্যানের নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা নিজেরা বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সময় মতো সবই করবো, একটি রূপরেখা ঠিক করে নিবো। তিনি বলেন, পৃথিবীতে কোন কিছুই বিতর্কের ঊর্ধ্বে না, এখানে ভালো এবং মন্দ আছে। আমরা এখন যে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করবো, আমাদের দলে এই পদগুলোর জন্য যোগ্য কমপক্ষে ১০০ লোক আছে। কিন্তু আমরাতো কমিটিতে ৩১ জনের বেশি নিতে পারবো না। তাই একজনের হিসেবে যিনি ভালো মানুষ আরেকজনের হিসেবে তিনি আবার খারাপ মানুষ, তাই ভালো মন্দের বিতর্ক থাকবেই। কিন্তু আমরা কতটুকু স্বচ্ছতার সাথে করতে পারলাম সেটাই হলো দেখার বিষয়। দলের দায়িত্ব পরিবর্তনশীল। দলের সিস্টেম অনুযায়ীই এখন একজন দায়িত্বে আসবে পরে সেখানে (সেই দায়িত্বে) আরেকজন আসবে। আমরা সেভাবেই কাজগুলো করি। যখন যার উপর দায়িত্ব পড়বে তখন তাকেই সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।