সৌরভ লোধ, বরুড়া (কুমিল্লা) :
কুমিল্লা জেলার বরুড়া-লালমাই উপজেলার মিলনস্থল শ্রীশ্রী শিব ও চন্ডী মন্দিরে আজ শুক্রবার মাসিক ভোগ অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানটি প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার এই মন্দিরে হয়ে থাকে।
তবে এই শুক্রবার মাসিক ভোগের সাথে অখন্ড গীতাযজ্ঞ ও অনুষ্টিত হয়। এতে করে ভক্তদের আনাগোনা ও ছিলো চোখে পড়ার মত।
কুমিল্লা জেলার ইতিহাস গন্থ থেকে জানা যায়,
চন্ডী মুড়ার উচুঁ ঢিবির উপর অবস্থিত এই মন্দির। এ মন্দিরের প্রবেশ পথে রয়েছে ১৪২টি সিঁড়ি। সিঁড়ির শেষ মাথায় মন্দিরের প্রধান প্রবেশপথ।
স্থানীয় জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, সপ্তম শতাব্দীতে রাজা দেব খড়গ তার স্ত্রী প্রতীভা দেবীর অনুরোধে তার স্মৃতিকে অমর করে রাখতে এখানে চন্ডী মন্দির ও এর পাশে আরও একটি শিব মন্দির নির্মাণ করেন। এর মধ্যে চন্ডী মন্দিরে স্বরসতী ও শিব মন্দিরে শিবকে স্থাপন করে দুজনের আলাদা আলাদা পূজা অর্চনা করা হত।
বিভিন্ন উৎসবে এ মন্দির প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও মন্দিরের পাশেই রয়েছে বেশ কয়েকটি ভবন যেগুলো ধর্মীয় আচার ও আলোচনার কাজে ব্যবহার করা হয়। মন্দিরে উঠার সিঁড়ির পাশে রয়েছে আরও একটি নট মন্দির।
মন্দিরের গায়ে পাওয়া শিলালিপি থেকে অনেকেই ধারণা করে হিন্দু ধর্মের আবির্ভাব ও পূর্বে মন্দিরটি এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সপ্তম শতাব্দীতে এদেশে বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও হিন্দু সনাতন সংস্কৃতি প্রায় একই সময়ে পাশাপাশি অবস্থান করেছিল।
খড়গ্ বংশীয় বৌদ্ধ রাজাদের প্রদত্ত “আশ্রাফপুর তাম্রফলক” উৎকীর্ন লেখামালা হতে জানা যায় যে, বৌদ্ধরাজ দেবখড়গ্ এর মহীয়সী রানী “প্রভাবতী” ছিলেন জন্মগতভাবে হিন্দু বংশোদ্ভুত। তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক বিদুষী রমনী।
সেখানেই রানীর ইচ্ছানুসারে মহারাজা শ্রী শ্রী চন্ডী মন্দির স্থাপন করে দেন। তিনি বৌদ্ধ হয়ে বো অষ্টভূজা শর্বানী মা- চন্ডীর পূজা করতেন।
চন্ডী দেবীর মন্দির চন্ডীমুড়ার রাজা-মহারাজাদের ইতিহাসের এক উজ্জল সাক্ষী। কুমিল্লা জেলার লালমাই এর উত্তর দক্ষিনে প্রায় ১১ মাইল দীর্ঘ লালমাই ময়নামতি পাহাড়ের দক্ষিণ প্রান্তে সর্ব্বোচ্চ পাহাড়চূড়ায় এর অবস্থান।