আমাদের অধিকার আমরাই আদায় করবো। হয় মরবো নয় অধিকার আদায় করবো। অধিকার আদায় করেই ঘরে ফিরবো তার আগে রাজপথ ছাড়বো না। হকারদের যুক্তিক আন্দোলনে আমরা তাদের পাশে আছি। পুনর্বাসন ছাড়া কোনো হকারদেরকে উচ্ছেদ করা যাবে না। আগামী সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করবো।
নারায়ণগঞ্জ শহরের হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে ও পুনর্বাসনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা হকার্স সংগ্রাম পরিষদের অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে হকার নেতারা এসব কথা বলেন।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল দশটায় চাষাড়া শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ অবস্থান কর্মসূচী পালন করে হকাররা।
এসময় নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বিনা নোটিশে হুট করে একটি সিদ্ধান্ত নিবেন আর হকারদের পেটি লাথি মারবেন তা চলবে না। হকাররা ফুটপাতে দোকানদারি করে তারা তো চুরি কিংবা মাদক বিক্রি করে না। তারা রোদবৃষ্টিতে ভিজে ফুটপাতে দোকানদারি করে। রাস্তা দখল করে না।যানজট তো হকারদের কারনে হয় না। যানজট তো অবৈধ অটোরিকশা ও স্ট্যান্ডের কারনে। তার দোষ তো আর নিরীহ হকারদের উপর চাপাতে পারেন না। হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে হকারদেরকে উচ্ছেদ করে দিবেন তা হতে পারে না। সারা বিশ্বের সব দেশেই হকার রয়েছে। আমরা তো এদেশের নাগরিক, তাহলে আমাদেরকে উপর কেনো এতো অত্যাচার। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে হকার উচ্ছেদ করবেন তা চলবে না। যেখানে যেতে হয় সেখানেই যাবো। আমাদের হকারদের অধিকার আদায় করবোই। সিটি কর্পোরেশন মেয়রের এমপিদের না। মেয়র মহোদয় আপনি আমাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন।
মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি কথায় কথায় বলে হকারদেরকে পুনর্বাসনের জন্য হকার্স মার্কেট দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে হকার রয়েছে ৫ হাজার আর হকার্স মার্কেটে দোকান দিয়েছেন ৬শ’। আর দুই হাত বাই দুই হাত জায়গার দোকান দিয়ে তো দোকানদারি চলে না। আমরা আপনাকে নৌকা নৌকায় ভোট দিতে মেয়র বানাইছি। কথায় কথায় হকার উচ্ছেদ করবেন না।
এমপি সেলিম ওসমান ও এমপি শামীম ওসমানকেও উদ্দেশ্য করে তারা বলেন, আপনারা আমাদের অভিভাবক, আপনারা গরীবের বন্ধু। আমরাও কিন্তু আপনাদেরকে ভোট দিয়ে এমপি বানাইছি। আপনারা এই অসহায় গরীব হকারদের জন্য কিছু করেন। আপনারা চাইলে সব কিছুই হয়। দয়া আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন।
তারা বলেন, পুলিশ প্রশাসনের ভাইদের বলবো আপনারা হকারদের সাথে আইনানুগভাবে কথা বলুন। বেআইনি ভাবে হকারদের উপর লাঠিচার্জ করবেন না। এরা অসহায় ও গরীব মানুষ। এরা আপনাদের দেখলেই এমনিতেই ভয় পায়। তাহলে কেনো আপনারা তাদের উপর লাঠিচার্জ করেন তাদের মালামাল নিয়ে যান। দয়া করে এগুলো আর করবেন না।
হকার নেতারা আরও বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা ফুটপাতে বসে দোকানদারি করতে পারছি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা মানবেতর জীবন-যাপন করছি। বাসা ভাড়া, ছেলেমেয়েদের স্কুলের বেতন দিতে পারছি না। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছি। প্রতিদিন কিস্তির টাকার জন্য এনজিওরা আমাদেরকে তারা দিচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা হকারেরা খুবই অসহায় ও মানবতার জীবন-যাপন করছি। দয়া করে আমাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থার আগে ফুটপাতে বসতে দিন। যতদিন পর্যন্ত হকারদের আন্দোলন কর্মসূচি চলবে আমরা ততদিন পর্যন্ত তাদের পাশে আছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা হকার্স সংগ্ৰাম পরিষদের আহ্বায়ক হকারনেতা আসাদুজ্জামান আসাদের সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্যে রাখেন, বিশিষ্ট শ্রমিকনেতা এড. মন্টু ঘোষ, শ্রমিকনেতা হাফিজুল ইসলাম, সেলিম মাহমুদ, আবদুল হাই শরীফ, ইকবাল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম গুলক, এম এ শাহিন, মহানগর হকার্স লীগের সভাপতি আঃ রহিম মুন্সী, সাধারণ সম্পাদক মো. পলাশ, হকার নেতা মো. রানা, মো. শাহিন, নিলুফা বেগম প্রমুখ।
অবস্থান কর্মসূচি শেষে চাষাড়া শহীদ মিনার হকাররা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের চাষাড়া থেকে শুরু করে দুই রেলগেইট হয়ে আবারও শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।