লিবিয়ার উপকূলে একটি জাহাজডুবির ঘটনায় ৩০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা সবাই ফরিদপুরের। অবৈধ পথে লিবিয়া থেকে পাচারকারীদের তুলে দেওয়া নৌকায় সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ফরিদপুরের তালমা থেকে নিহতদের স্বজনরা প্রবাস টাইমকে জানিয়েছেন, তালমা, শঙ্কর পাশা, বাশাকাড়ি, যাত্রাবাড়ী, পুকুরিয়া, নগরকান্দা ও হাট কৃষ্ণপুরের মোট ৪৭ জন ইতালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
স্থানীয় দালাল মুরাদ বেপারির মাধ্যমে তার ৫ জানুয়ারি বাড়ি থেকে বের হয়। অবৈধ উপায়ে তাদেরকে লিবিয়া নিয়ে আলমগির নামে আরেক দালালের হাতে তাদেরকে ছেঁড়ে দেয়। মানবপাচারকারীচক্রের বড় হোতা আলমগির। তার বাড়ি একই জেলার আদমপুর গ্রামে। লিবিয়াতে তার নিজস্ব গেম ঘর রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে দালাল মুরাদ লোক গুছিয়ে টাকা-পয়সা নেয়। আর আলমগির লিবিয়া থেকে সাগরপথে পার করে দেয়।
এ ঘটনায় দালাল চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে নগরকান্দা থানা পুলিশ। তবে, গ্রেফতারকৃত দালালকে মুক্তি করতে মনিরুজ্জামান সরদার নামে স্থানীয় এক নেতা তদবির করছেন এমন অভিযোগ দিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা। দালাল চক্রের সাথে মনিরুজ্জামান সরদার জড়িত এমন অভিযোগ তাদের।
এদিকে, ইনফোমাইগ্রেন্টস তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, মধ্য ভূমধ্যসাগরে ডুবন্ত নৌকা থেকে বাণিজ্যিক জাহাজ ‘ফ্রোল্যান্ড’ ১৭ জনকে উদ্ধার করে। তাদের মধ্যে সাইফুল অন্যতম। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ডুবে যাওয়া জাহাজে উঠতে গিয়ে পা ভেঙ্গে যায় সাইফুলের। তাকে চিকিৎসার জন্য সিসিলিয়ান শহর মোদিকার ‘ম্যাগিওর-বাগলিয়ারি’ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সাইফুল জানান, সাগর হঠাৎ উত্তাল হয়ে উঠে। কেউ কেউ ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। আমরা একসাথে আটকা পড়েছিলাম, খুব ঠান্ডা ছিল এবং ঢেউ আমাকে অসুস্থ করে দিয়েছি। ঠাণ্ডা অসহনীয় ছিল। পাচারকারীরা যখন আমাদের জাহাজে উঠিয়ে দেয়, তখন তারা আমাদের বলে ছিল যে নৌকায় পানি এবং খাবার থাকবে, কিন্তু জাহাজে খাবার কিছুই ছিলনা। আমার চোখের সামনেই অনেককেই ডুবে যেতে দেখেছি। এদিকে, ভূমধ্যসাগরে এমন ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে সুশীল সমাজ। তাদের মতে, ইতালি সরকারের গাফিলতির কারণে উদ্ধারকারী জাহাজ দেরিতে পৌঁছানোয় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।
অপরদিকে, এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে স্থানীয় দালাল মুরাদ বেপারি। সোনার হরিণের আশায় ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ না হলেও দালালদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে প্রত্যেকের পরিবার এখন সর্বস্বান্ত। একেক জনের পরিবারের কাছ থেকে দালালচক্র এরই মধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। প্রিয়জন হারিয়ে শোঁকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামের পর গ্রামে। কান্নায় ভারী হচ্ছে তালমার আকাশ। জড়িতদের বিচারের দাবী জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।