মতলব উত্তর উপজেলায় কালভার্টের কাজ না করেই প্রথম বিল ২০ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও নানা টালবাহানায় কাজের কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন তারা। এদিকে কালভার্টি নির্মাণ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। উপায়ান্তর না দেখে নিজেদের উদ্যোগে পুনরায় অস্থায়ী বাঁশের সাঁকোটি মেরামত করেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে বুধবার (১৯ মার্চ) মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন নবীপুর গ্রামবাসী।
জানা যায়, উপজেলার বাগানবাড়ি ইউনিয়নের নবীপুর, খাগুরিয়া, হাঁপানিয়াসহ অন্যান্য গ্রামের মানুষ চলাচলের জন্য একটি ব্রিজের দাবি তোলে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ৪০ লাখ ৫০হাজার টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালের ওপর ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যে নবীপুর গ্রামের খলের উপর থেকে নান্নু মিয়ার বাড়ি একটি কালভার্ট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০২৪ সালে এপ্রিল মাসে কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুমন এন্টারপ্রাইজ। পরে ঐ স্থানের সুবিধাভোগীদের দিয়ে খালের দুই পাশে বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন করায় এবং ৫০ থেকে ৬০ টি গাছ কর্তন করায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কার্য সহকারী মো. আব্দুল কুদ্দুস। ঐ স্থানের লোকজন কুদ্দুসের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান কিছুদিন পরে কাজ শুরু হবে।
আরো জানা যায়, এভাবে দুই থেকে তিন মাস অতিবাহিত হলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে ঐ অফিসের কর্মকর্তারা জানান কালভার্টি এই স্থান থেকে অন্য স্থানে দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে নবীপুর গ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল থেকে নান্নু মিয়ার বাড়ি সেতু/কালভার্টের নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সেতুর আইডি নম্বর-৯৫৫৪১৭ এর ১ম চলতি বিল হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের স্মারক নং-৫১.০১.০০০০.০২৪.৪১.৩৮১.২৩-১২৫৬ মূলে মতলব উত্তর উপজেলায় ২০২২৩-২০২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ রাস্তার ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তার সুমন এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ২০ লক্ষ টাকার চলতি বিল উত্তোলন করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে “গ্রামীণ রাস্তায় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু/কালভার্ট নির্মাণ (সংশোধিত)” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অনুমোদিত প্রকল্প স্থান পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ খালের উপর অবস্থিত। প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের নিমিত্তে লে-আউট প্রদান করতে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ কাজ না করার জন্য আপত্তি জানান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আপত্তির প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের ১১তারিখে উপজেলা প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক সভাপতিত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আলোচন সভার সিদ্ধান্তে কালভার্টি হাঁপানিয়া আরশাদ সিকদারের বাড়ি থেকে কিনাচক এলাকার কালভার্টটি করার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু কাজের প্রথম বিল নবীপুর গ্রামের খলের উপর থেকে নান্নু মিয়ার বাড়ি একটি কালভার্ট নির্মাণ এই নামে উত্তোলনের বিষয় জিজ্ঞাসা করলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় কোন উত্তর দিতে পারেনি।
নবীপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেন, দ্বীন ইসলাম, আফজাল মোল্লা, সিরাজ মোল্লা, কাঞ্চন বেপারী জানান, আমরা দীর্ঘদিন পিআইও অফিসে দৌড়াদৌড়ি করে কালভার্টটি অনুমোদন করাই। পিআইও অফিসের আব্দুল কুদ্দুস এসে আমাদেরকে জানান এখনে একটি কালভার্ট নির্মাণের অনুমোদন হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। আপনারা খালের দুই দিকে বাঁধ দিয়ে পানি সেচ করেন এবং রাস্তা নেওয়ার দুই পাশের গাছ কাটতে হবে। তার কথা অনুযায়ী আমরা খালের দুই পার ভরাট করি এবং ৫০ থেকে ৬০টি গাছ কেটে ফেলি। কাজ শুরু না হলে আমরা কুদ্দুস এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদেরকে জানান এখানে আর কালভার্টি নির্মাণ হবেনা।
বাগানবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সাইদুল ইসলাম, জানান, যখন জানতে পারলাম এখানে কালভার্টটি হবে না। তখন বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজা নিয়ে দেখি কালভার্টি নির্মাণ না করে এখান থেকে ২০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে। আমি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্তের জোর দাবি জানাচ্ছি।
সুমন এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জানান, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আমার থেকে কাজ সাব ঠিকাদার নিয়ে গেছে। আপনারা অফিসে যোগাযোগ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি জানান, ঐ সময়ে আমি ছিলামনা। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছি।