চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর উপজেলা-মতলব দক্ষিণ উপজেলা) নির্বাচনী আসনের চারবারের সংসদ সদস্য, সাবেক তথ্য ও সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা মো. নুরুল হুদা ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি বুধবার সকাল ৭ টা ৫৫ মিনিটে নিউইয়র্কের উইল কর্ণেল প্রেসবাইটেরিয়ান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
কয়েকদফা জানাযার পর তাকে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে সর্বশেষ জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাগানবাড়ী ইউনিয়নের খন্দকারকান্দির নিজ বাড়ীর পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
আজ ৮ম তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার মতলব উত্তর- দক্ষিণ উপজেলায়
আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী নুরুল হুদা ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা।
প্রসঙ্গত, নুরুল হুদা চাঁদপুর-২ নির্বাচনী আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য এবং সাবেক তথ্য ও সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ১৯৫৪ সালে স্কুলে পড়ার সময় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে বৃহত্তর কুমিল্লায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯সালের ১ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২৮ বছর বয়সে সরকারি চাকরি (সহকারী কমিশনার) ছেড়ে চাঁদপুর-২ নির্বাচনী আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই বছরেরই ৪ এপ্রিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এ আসন থেকে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ইং সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯১ সালের প্রথম ৬মাস তথ্য প্রতিমন্ত্রী এবং পরবর্তী দুই বছর সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় ৪০ বছর মতলবে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
মরহুম নূরুল হুদা সাহেব নেতা হয়েছেন মতলবের সাধারণ খেটে খাওয়া দরিদ্র কৃষক, শ্রমিক, মা বোন, দলমত নির্বিশেষে মতলবের সকল স্তরের মানুষের ভালোবাসায় এবং দোয়ায়। বড় বড় সাহেবেরা উনাকে ভুলে গেলেও মরহুম নুরুল হুদা আজও বেঁচে আছেন মতলবের লাখো মানুষের হৃদয়ে, মা বোনদের চোখের জলে, মতলবের জাতীয়তাবাদী হাজারো নেতাকর্মীর নয়নের মাঝে।
মরহুম নুরুল হুদার বাড়ি মতলব উত্তর উপজেলার বাগানবাড়ী ইউনিয়নের খন্দকারকান্দীতে। তার দুই সন্তানের বড় সন্তান চাঁদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদ ও ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন তানভীর হুদা আরেক সন্তান সানভীর হুদা যুক্তরাষ্ট্রের একটি ইউনিভার্সিটি থেকে লেখাপড়া শেষ করেন।
তানভীর হুদা শিক্ষকতার পাশাপাশি তার বাবার আর্দশকে লালন করে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি তৃণমুল রাজনীতিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় একজন রাজনৈতিক নেতা। ২০১৮ জাতীয় নির্বাচনে চাঁদপুর-২ নির্বাচনী আসন থেকে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক-এ মরহুম নুরুল হুদার বড় সন্তান জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হুদা বাবার ৮ম তম মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রয়াত বাবাকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলআমিন, যেন তার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করে সেজন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
মরহুম নুরুল হুদার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও চাঁদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হুদা বলেন, আজ ২৫শে জানুয়ারি, আমার বাবা মরহুম নুরুল হুদা সাহেব আজ থেকে ৮ বছর আগে আজকের এই দিনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের ডাকে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। ফেসবুকে কিছু লিখি, কিন্তু ৮বছরের প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ বাবার স্মৃতি, বাবার ভালোবাসা, বাবার শূন্যতা তাড়া করে বেড়ায় আমার পুরো পরিবারকে।
শুধু আমার পরিবারকে কেন হবে? মরহুম নুরুল হুদা সাহেবের স্মৃতি, ভালোবাসা ও শূন্যতা আজ উপলব্ধি করছে মতলবের হাজার হাজার জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষ। এরাও তো ছিল আমাদের পরিবারের একান্ত সদস্য।
তিনি বলেন, সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার আমার বাবা ঘরে বাইরে অন্যায় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। রাজনীতিতে এটা অবশ্য খুবই স্বাভাবিক। তবে আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে এবং মতলবের সাধারণ মানুষের দোয়ায় প্রতিবার উনি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ধানের শীষের নেতৃত্ব এই মতলবে ধরে রেখেছিলেন।
মৃত্যুর কয়েক বছর আগে থেকে বাবা মাঝে মধ্যেই আমাকে বলতেন, আমি যেদিন থাকবোনা, তখন মতলবের মানুষ বুঝতে পারবে কত সংগ্রামের মধ্যে আমি এই দলটাকে সংগঠিত করে রেখেছি।
আজকে মতলবের বিএনপি বহুধারায় বিভক্ত। তৃণমূলের কর্মীরা যাদের কাঁধে ভর করে আমরা নেতা হই, তারা আজ দিশেহারা, হতাশ। মনোনয়নের লোভে আজ এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে অত্যন্ত অশালীন ও আপত্তিকর উপায়ে আক্রমনে ব্যস্ত। কমিটি নামক কাগজে সিল মোহর লাগাতে পারলেই আমরা বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা হচ্ছি। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে ঘায়েল করতে পারাটাই যেন আজ রাজনীতির মূল লক্ষ্য।
যদি দলের মধ্যে এই বিভক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয় তখন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করব কি করে? দলকে ঐক্যবদ্ধ করার সুযোগ বা ক্ষমতা যাদের হাতে ছিল, উনারা কি তাদের সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন? মতলবের সচেতন জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মীরা এর উত্তর ভালো দিতে পারবেন।
বিগত প্রায় ৪০ বছর যেই নুরুল হুদা সাহেব বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই নুরুল হুদার কথা যারা বলে তারা সব ধরনের কমিটি থেকে বাদ। এটাই কি দলকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা?
যেই মানুষটি প্রায় ৪০ বছর মতলবে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, মন্ত্রী পদে ছিলেন, মতলবের ঘরে ঘরে যার সৃষ্টি করা হাজারো কর্মী, চাঁদপুর জেলা বিএনপির যিনি ছিলেন অভিভাবক, আজ তার মৃত্যুর দিনটিতেও চাঁদপুর জেলা বিএনপি এবং তাদের অনুমোদিত কমিটিগুলো মরহুম নুরুল হুদা সাহেবকে যথাযথ ভাবে স্মরণ করার উদারতাটুকু দেখাতে পারেনি। আমি জানি অনেকেরই হৃদয় কাঁদে, কিন্তু কিছু করতে পারেনা যদি কর্তাব্যাক্তিরা নাখোশ হন, যদি পদ না থাকে। পদের মায়ায় আজ বিবেক, মানবতা, দায়িত্ববোধ সবই ধ্বংস হয়ে গেছে।
মরহুম নুরুল হুদা সাহেব নেতা হয়েছেন মতলবের সাধারণ খেটে খাওয়া দরিদ্র কৃষক, শ্রমিক, মা বোন, দলমত নির্বিশেষে মতলবের সকল স্তরের মানুষের ভালোবাসায় এবং দোয়ায়। বড় বড় সাহেবেরা উনাকে ভুলে গেলেও আমার বাবা আজও বেঁচে আছেন মতলবের লাখো মানুষের হৃদয়ে, মা বোনদের চোখের জলে, মতলবের জাতীয়তাবাদী হাজারো নেতাকর্মীর নয়নের মাঝে।
হে আল্লাহ রাব্বুল আলআমিন, আমার বাবার গুনাহগুলো মাফ করে তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমার বাবাকে আপনি কবুল করে নিন আল্লাহ। আপনারা সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।